ফিলিস্তিনের গাজায় শিশুদের ওপর হামলার কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। গাজায় ইহুদিবাদী সেনাদের হামলায় হাজার হাজার শিশু নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নিল বিশ্ব সংস্থাটি।
শনিবার সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ অনেকে মারা যাওয়ায় ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
দখলদারদের বর্বর হামলায় শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, হামাসকে সমর্থন করে সংস্থাটি নিজেকে ইতিহাসের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক টুইটে জাতিসংঘের এই পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
গিলাদ এরদান বলেন, এটি একটি লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত। আমাদের সেনাবাহিনী হলো বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিকতাসম্পন্ন বাহিনী।
এক ব্যক্তিই একে কালো তালিকাভুক্ত করেছেন। তিনি হলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করছেন। তিনি ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা দ্বারা পরিচালিত।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘের বার্ষিক ‘চিল্ড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ প্রতিবেদনে ইসরায়েলের তালিকাভুক্তির বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয়, সেজন্য এমনটা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আগামী ১৪ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।
ডুজারিক বলেন, “ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ফোন কলটি দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য। স্পষ্টভাবেই বলা যায়, এ ধরনের কিছু আমি আমার ২৪ বছরে এই সংগঠনের সাথে দায়িত্ব পালনকালে দেখিনি।”
সশস্ত্র সংঘাতে শিশুবিষয়ক জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে ‘শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় পক্ষগুলোর সম্পৃক্ততার’ তালিকা দেওয়া হয়। এতে হত্যা এবং আহত করার প্রমাণ এবং যৌন সহিংসতার তথ্য থাকে।
এই তালিকায় রাশিয়া, গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো, সিরিয়া ও সোমালিয়ার নাম রয়েছে। এছাড়া ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-শাবাব, তালেবান, আল-কায়েদার মতো সংগঠনও আছে।জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, অনেক আগেই ইসরায়েলকে কালো তালিকায় যুক্ত করা উচিত ছিল। গাজার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকায় ১৫,৫৭১ এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রতি ১০ ফিলিস্তিনি শিশুর ৯জনই ‘ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে’ রয়েছে। ক্ষুধা, পিপাসা এবং মারাত্মক অপুষ্টির কারণে অনেক ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা হু গত সপ্তাহে জানিয়েছে, গাজার প্রতি ৫ শিশুর ৪জনই প্রতি তিন দিনে অন্তত একদিন পুরো দিন না খেয়ে থাকে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post