বিশ্বে যখন করোনার প্রতিষেধক দেয়া চলছে পুরোদমে, তখনই লন্ডন সহ দক্ষিণ ইংল্যান্ডে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস। যার জেরে যুক্তরাজ্যে আবার শুরু হয়েছে লকডাউন। ইউরোপের অনেক দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
নতুন ধরনের এই করোনা ভাইরাস নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। যার জেরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে সম্প্রতি অতি দ্রুত গতিতে করোনা ছড়িয়েছে। তবে জনসন জানিয়েছেন, নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস আরো মারাত্মক কি না, তার জন্য আরো প্রবল অসুস্থতা হচ্ছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(ডাব্লিউএইচও)-কে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। লন্ডনের নতুন যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসের কবলে পড়েছেন।
ভাইরাসের চরিত্র বদল করা নতুন নয়। করোনা ভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখনো পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলির মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং ভয়ঙ্কর ও দ্রুত ছড়াচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে যে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে, তা আগের থেকে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে এই ভাইরাসে মানুষের অসুস্থতা আরো জটিল চেহারা নিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরো মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য।
এই ভাইরাস থেকে রক্ষাপেতে স্পেনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মান ইতালি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। বাদ পরেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও, ওমান সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ফের লকডাউন ঘোষণা দিচ্ছে। ৪-মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ওমানে এক ধরণের অঘোষিত রাত্রিকালীন লকডাউন দেওয়া হয়েছে। দেশটির সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত ৮টা থেকে সকাল ৫টা নাগাদ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ করোনা মোকাবেলায় ওমানের থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ
নতুন ধরনের এই করোনা ভাইরাসের উপসর্গের ব্যাপারে যতটুকু যানাগেছে, তার প্রথম স্তর হচ্ছে, সংক্রমণের তৃতীয় দিন থেকেই যেসব ভাইরাল লক্ষণগুলি দেখা দিবেঃ
১. শরীরে ব্যথা
২. চোখের ব্যথা।
৩. মাথা ব্যথা।
৪. বমি বমি ভাব।
৫. ডায়রিয়া।
৬.নাক বা অনুনাসিক প্রবাহ
৭. পচন।
৮. চোখ জ্বলন্ত।
৯. প্রস্রাব করার সময় পোড়ানো।
১০. জ্বর অনুভূতি।
১১) গলা ফাটা।
লক্ষণের ১ থেকে ৩দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর শুরুর আগে পদক্ষেপ নিন। সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রচুর পরিমাণে তরল, বিশেষত বিশুদ্ধ পানি পান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার গলাটি আর্দ্র রাখতে এবং ফুসফুস পরিষ্কার করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
লক্ষণের চতুর্থ থেকে অষ্টম দিন পর্যন্ত যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তা হচ্ছে
১. স্বাদ এবং / বা গন্ধ ক্ষতি।
২. সর্বনিম্ন প্রচেষ্টা সহ ক্লান্তি।
৩. বুকের ব্যথা (পাঁজর খাঁচা)
৪) বুক শক্ত হওয়া।
৫. নীচের পিছনে ব্যথা (কিডনি অঞ্চলে)।
আরো পড়ুনঃ করোনার নতুন ধরন শনাক্তে গোটা বিশ্বে আতঙ্ক
সংক্রমণের ৯ দিন থেকে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে যায় এবং ৯ দিন পর থেকে ১৪ দিন অবধি নিরাময় চলতে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করা যাবেনা। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে বসে থাকুন। বিশ্রাম নিন এবং ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান। প্রতিদিন দেড় লিটার পানি পান করুন এবং সমস্ত খাবার গরম করে খাওয়া উচিৎ। ঠান্ডা খাবার পরিহার করুন।
করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ আরও ভয়াবহ বলেই এই সমস্ত দেশ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এমতাবস্থায় যত্নবান না হলে এবং সরকারের দেওয়া সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি না মানলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post