হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের এক্সপোর্ট কার্গোর জায়গা খালি করার নামে ১২ কোটি টাকা মূল্যের কনক্রিটের স্ল্যাব তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বেবিচকের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
মন্ত্রণালয়ে এমন অভিযোগ করার পর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাব না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আরেক দফা চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। সেই চিঠিতে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
দুটি চিঠির পর বিমানবন্দরের ১২ কোটি টাকার স্ল্যাব ‘গায়েবের’ এখনো কূলকিনারা হয়নি। তবে অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলীর দাবি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। স্ল্যাব বিক্রির সুযোগ নেই বলে জানান তারা।
বেবিচক সূত্র জানায়, গত ১৫ মে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অনুপ কুমার তালুকদার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বেবিচক চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়।
সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, বেবিচকের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গোর অংশ নির্মাণের জায়গা খালি করার নামে রাডার ভবন সংলগ্ন স্ট্যাক ইয়ার্ড থেকে ১০/১২ কোটি টাকা মূল্যে কংক্রিট স্ল্যাব ভেঙে তা উধাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এর আগেও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
চিঠিতে আরও বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সাইটে এপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ভাঙা ১৫ বছর ধরে রাডার ভবন ও রানওয়ের ১৪ প্রান্তের কাছে স্তূপ আকারে দীর্ঘদিন রাখা ছিল।
সম্প্রতি এক্সপোর্ট কার্গো নির্মাণের জন্য জায়গা খালি করার নামে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প পরিচালক এম মাকসুদুল ইসলামের নির্দেশে সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) তারেক আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী, (সিভিল) মো. ইসমাইলের যোগসাজশে গত ১৫ বছরের কনক্রিট স্ল্যাবের ভাঙা অংশগুলো ঠিকাদার অশ্রু ও মোমিনের সহযোগিতায় বিক্রি করে। যার মূল্য প্রায় ১০/১২ কোটি টাকা। পরে তা তারা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে গত ২২ মে অভিযোগ পড়েছে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, যদি এক হাজারটি স্ল্যাব গত ৫ বছরে ভাঙা হয়ে থাকে তবে তার আনুমানিক বাজারমূল্য ১২ কোটি টাকা।
সরকারি সম্পতি স্পট নিলামের ব্যবস্থা না করে শুধু নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য এগুলো গোপনে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। এই স্ল্যাবের ভাঙা অংশগুলো প্রশাসন শাখা কেন নিলামের ব্যবস্থা নেয়নি সে বিষয়ে অভিযোগকারী প্রশ্ন তুলেছে।
অভিযোগের বিষয়টি যথাযথ তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য দ্বিতীয় পত্রে (চিঠি) অনুরোধ জানানো হলেও এ বিষয়ে অদ্যবধি কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।
মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় পত্রের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আগামী ৩০ মে’র মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দিয়ে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।
বিদেশ থাকায় দ্বিতীয় চিঠির বিষয়ে জানতেন না জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এর আগে এমন একটা অভিযোগে বেবিচক চিঠি পেয়েছিল।
সেই চিঠির প্রেক্ষিতে তারা একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। প্রথম চিঠি পাওয়ার পর যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল সেই কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
এখানে দুটোই হতে পারে। ঘটনার সত্যতাও হতে পারে, আবার কেউ শয়তানি করে মিথ্যা অভিযোগও করতে পারে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, যদি এই ঘটনায় কোন সন্দেহ থাকে অবশ্যই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সেটি নিষ্পত্তি করা হবে। কারণ এটি তো টাকা পয়সার বিষয়।
ফলে সহজে এমন অভিযোগগুলো ছেড়ে দেওয়া যায় না। যদি তারা জড়িত থাকে অবশ্যই তাদের খেসারত দিতে হবে। ছাড় দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে জড়িত দুই প্রকৌশলী একটি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকা থেকে কংক্রিটের স্ল্যাব গোপনে বিক্রির সুযোগ নেই। স্ল্যাবগুলো এখনও রয়েছে। এটি মিথ্যা অভিযোগ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post