চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল বারিক। সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় ‘অবৈধ’ উপার্জনের মাধ্যমে হয়ে ওঠেন ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক।
তবে এসব অর্থবিত্তের পুরোটা নিজের নামে রাখেননি আব্দুল বারিক, কিছুটা নিজে রেখে বাকি সবই রেখেছেন স্ত্রীর নামে। ফলে আব্দুল বারিকের অবৈধ আয়ে এখন কোটিপতি স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানম।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ফেনীর তিনটি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তার নামে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অর্থ খাটিয়েছেন তিনি। তবে এতটুকু করেই শেষ নয়, দুজনের নামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদও।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং নিজ জেলা নোয়াখালীতেও ফ্ল্যাট, জমি ও বাড়ি রয়েছে তাদের। সব মিলিয়ে এ দম্পতির বর্তমানে পারিবারিক ব্যয়সহ সম্পদের পরিমাণ সাত কোটি টাকারও বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
এ নিয়ে দুজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুদক। সোমবার দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ পৃথক দুটি মামলা করা হয়। কার্যালয়টির উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সবুজ হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুদকের কাছে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এক মামলায় আবদুল বারিক ও স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানম এবং অপরটিতে শুধু আবদুল বারিককে অভিযুক্ত করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আবদুল বারিক ও তার স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমকে সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক।
তাদের জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের পর জানা যায়- এক কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক ফেরদৌস ইয়াসমিন খানম।
পেশায় গৃহিণী হয়েও স্বামীর অবৈধ আয়ে এসব সম্পদের মালিক হন তিনি। আবদুল বারিকও এক কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টমসে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান আবদুল বারিক। ২০১০ সালে তিনি রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি লাভ করেন। পরে ২০১৪ সালে অবসরে যান।
দুদক জানায়, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়েই এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন আবদুল বারিক। একটি মামলায় আব্দুল বারিকের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে অর্জিত এক কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৯২২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ৭০ লাখ ৬২ হাজার ১৫৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
অপর মামলায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে অর্জন করা ৩২ লাখ ২৬ হাজার ছয় টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং এক কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
জানা গেছে, নিজ নামে চট্টগ্রাম নগরের ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১৬৬ লাখ টাকা, এইচবি অটোমোবাইলস অংশীদারী ব্যবসায় ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪২ টাকা বিনিয়োগ করেন আবদুল বারিক।
এছাড়াও তার ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার গাড়ি, সেভিং সার্টিফিকেট ক্রয় বাবদ ১০ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় দুই লাখ ২১ হাজার ২৬ টাকাসহ স্থাবর-অস্থাবর নানা সম্পদের তথ্য পায় দুদক।
এছাড়া স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের নামে নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ছয়তলা বাড়ি, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে এক হাজার ৭৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে নয় শতক জমি, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় জমি, হালিশহরের সোনালি আবাসিক এলাকায় ভবন ও জমি, নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে ১৬ কাঠা জমি, ঢাকার আশকোনায় এক হাজার ৩৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, রামচন্দ্রপুরে ৫০ শতাংশ জমি, নিজ জেলা নোয়াখালীতে ছেলের নামে ৫০ শতাংশ জমিসহ সর্বমোট দুই কোটি ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
এর বাইরে তিন লাখ ৮১ হাজার টাকার মূল্যের একটি প্রাইভেটকার, ঢাকার উত্তরা হাসপাতালে পাঁচ লাখ টাকা, ফেনীর আলকেমি হাসপাতালে ছয় লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রাম নগরের ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬৪ লাখ টাকা বিনিয়োগসহ ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৮১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
এদিকে, দুদক চট্টগ্রাম জেলা-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদত বলেন, কমিশনের নির্দেশে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post