দেশের পরতে পরতে প্রবাসীদের ভূমিকা অবিশ্বাস্য। দেশের অর্থনীতিসহ বিনিয়োগে রাখছেন অসামান্য অবদান। এছাড়া দুর্যোগে-সঙ্কটে তারা পাশে থাকছেন অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে।
প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের অর্থে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু এতোসবের পরও নানামুখী বঞ্চনায় ভারাক্লান্ত প্রবাসীরা। সমস্যার বেড়াজালে অনেকে হচ্ছেন দেশ বিমূখ।
তারা নানাভাবে বিদ্যমান সমস্যা তুলে ধরে দাবী জানিয়ে আসছেন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু সমস্যার সমাধান আশ্বাস-প্রতিশ্রুতিতেই থাকছে বন্দি।
তাদের সার্বিক সমস্যা লাগবে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না এখনো। বরং বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষা ও অধিকার দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
সেকারণে গত মঙ্গলবার সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রবাসীদের ভোগান্তি তুলে ধরেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
এভাবে চললে জ্ঞানে-গুনে অভিজ্ঞ, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ প্রবাসীরা এক সময় আস্থা, ভালোবাসা হারিয়ে দেশ বিমুখ হয়ে পড়বে।
বিদ্যমান সমাধানহীন সমস্যার মধ্যে রয়েছে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যু। এতে বাংলাদেশি আইনের জটিলতায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা কয়েক লাখ প্রবাসী।
এ সমস্যার সমাধান না হলে দেশে ব্যবসা-বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে, মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন প্রবাসীরা।
কারণ, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যবাধকতা ও স্ব-শরীরে উপস্থিত হওয়ার যে নিয়ম করা হয়েছে তাতে বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বিশেষত বয়ঃজ্যেষ্ঠ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। এ নিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্টন, মামলা দায়ের ও মামলা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রয়োজন পড়ে।
আগে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যুর ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার বিধান ছিল না। গত কয়েকবছর ধরে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রবাসী বাঙালিদের বরাত দিয়ে ব্যারিস্টার নাজির আরো বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করতে গিয়ে অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে ৬ থেকে ৮ মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। অসুস্থ অনেকে সশরীরে উপস্থিত হতে অক্ষম হলে তার কাজ সম্পাদন করার সুযোগ থাকে না।
এতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষা ও অধিকার দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। পুরাতন নিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭ থেকে ৮ বছর আগে বৃটেন থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়ার নিয়ম ছিল ড্রাফট করে আইডিসহ যে কোনো ব্যারিস্টার বা সলিসিটরের সামনে গিয়ে দস্তখত করতে হতো।
পরে ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসে পাঠিয়ে লিগেলাইজেশন করে হাইকমিশনে অ্যাটাস্টেশনের জন্য পাঠানো হত। তখন স্ব-শরীরে কেবলমাত্র ব্যারিস্টার বা সলিসিটরের সামনে উপস্থিত হতে হতো।
প্রবাসীরা বিশেষ করে যারা বয়স্ক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা সমস্যায় পড়েন। হাইকমিশন কয়েক জায়গায় মোবাইল কনস্যুলার সেবা চালু করায় সমস্যা কিছুটা দূর হয়েছিল।
কিন্তু দু’বছর আগে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করায় কয়েক লাখ প্রবাসী পড়েছেন বিপাকে।
যে কোনো স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের ইস্যুকৃত পাসপোর্টই সর্বোচ্চ আইডি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, বৃটিশ পাসপোর্ট বা বৃটিশ পাসপোর্টে যাদের ‘নো ভিসা রিকয়ার্ড ফর ট্রাভেল টু বাংলাদেশ’ স্টিকার আছে তাদেরকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করতে আলাদা পাসপোর্ট করার বাধ্যবাধকতা অমূলক।
কারণ, বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বা পিতামাতার নাগরিকত্ব বা বাংলাদেশের সাথে যথাযথ যোগাযোগের প্রকৃত প্রমাণপত্র ছাড়া এ স্টিকার ইস্যু করা হয় না।
এতকিছুর পরও কেনো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক তার ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি।
জটিলতা তৈরি করায় বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রবাসীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করে তিনি আরো বলেন, নতুন নিয়ম করে প্রবাসীদেরকে বিড়ম্বনায় ফেলে, তাদের সম্পত্তির অচলাবস্থায় প্রবাসীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব জটিলতা নেই বলে তারা সেদিকে ঝুঁকছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post