নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী আনিকা বিনতে ইউসুফ আত্মহত্যা করেছে।
পরিবারের অভিযোগ, স্বামীর পরকীয়া, নির্যাতন ও শ্বশুরবাড়ির অসহযোগিতা সইতে না পেরেই আনিকা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে ও মামলাটি তদন্তাধীন আছে বলে মঙ্গলবার (৭ মে) নোয়াখালী সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি আরটিভিকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, আনিকার মৃত্যুর ৪ দিন পর গত ৩০ এপ্রিল স্বামী ফারদিন আহমেদ ওহি(৩১), শ্বশুর আকতার হামিদ (৬৭) ও শাশুড়ি নূর জাহান বেগমকে আসামী করে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ১নং আমলি আদালতে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন নিহত আনিকার বাবা মো.ছায়েফ উল্ল্যাহ্।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত আনিকা বিনতে ইউসুফ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে অভিযুক্ত ফারদিন আহমেদ ওহির সাথে পরিচয় হয়।
এরপর প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয় দুজনের। বিবাহের কিছুদিন পর পুনরায় মাল্টায়(বিদেশ) চলে যায় ফারদিন।
বিদেশ যাওয়ার পর আনিকা তার স্বামীর ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামের আইডিতে বিভিন্ন মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ছবি এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহনের ছবি দেখত পায়।
এজাহারে সূত্রে আরও জানা যায়, আনিকা তার স্বামী ওহিকে বিষয়গুলো জানালে আনিকার ওপর ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হয়ে যায় সে।
স্বামী দেশে আসার পরেও সারাদিন বিভিন্ন মেয়েদের সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকতে দেখেন আনিকা।
এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে আনিকা ফের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে জানা যায়, ঘটনার দিন একটি মেয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে থেকে ম্যাসেঞ্জারে আনিকাকে তার স্বামীর অশালীন বার্তার কিছু স্কিনশর্ট পাঠায়। স্কিনশর্ট গুলোতে দেখা যায় যে,অই মেয়েকে বিভিন্ন যৌন উত্তেজক অশালীন বার্তা পাঠায় আনিকার স্বামী ওহি।
পরবর্তীতে ঘটনার দিন সকালে স্ক্রিনশট গুলো স্বামীকে পাঠালে আনিকার সাথে ফের চরম দুর্ব্যবহার ও অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে ফারদিন আহমেদ ওহি।
এমন আচরণের পর শ্বশুর-শাশুড়িকে জানালে উলটো আনিকাকেই দোষারোপ করা হয় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে আনিকা তার স্বামীর অন্যায় ও অনৈতিক আচরণ সইতে না পেরে রাগে ক্ষোভে বিষ পানে আত্মহত্যা করেন।
নিহত আনিকার ছোট বোন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অবনি বলেন, আপুর স্বামী ফারহিন হামিদ ওহি মাদকাসক্ত। তিনি অনেক মেয়ের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত।
বিয়ের পর থেকেই স্বামী কর্তৃক গালিগালাজ, লাথি, কিল, ঘুষি, থাপ্পড়, জুতার বাড়িসহ বিভিন্ন রকমের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আনিকা আপু। বিয়ের ১৭ দিন পর বিদেশ (মাল্টা) চলে যায় ফারদিন।
পরবর্তীতে আর্থিক সঙ্কট দেখিয়ে গ্রিন কার্ড, পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য আনিকা আপুকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় সে। স্বামীর অত্যাচারে নিজের ক্যারিয়ারেও পেছাতে হয় আনিকা আপুকে।
গ্রাজুয়েশন শেষ করার দুই বছরেও মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেন নি এবং কোন চাকরির পরীক্ষার প্রিপারেশনও নিতে পারেননি ওনি।
আনিকার ছোট বোন অবনী আরও বলেন, সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল আনিকা আপু ফেসবুক ম্যাসেজে অন্য এক মেয়ের সাথে স্বামীর অশ্লীল মেসেজের সত্যতা পায়। স্বামীর অবহেলার সাথে এসব তথ্যে অসহ্য যন্ত্রণায় ভেঙে পড়ে আনিকা আপু।
এ বিষয়ে জানতে নিহত আনিকার শশুর ও মামলার ২নং আসামী আকতার হামিদের মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং বক্তব্য জানতে খুদে বার্তা দেওয়া হলে তারও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নোয়াখালীর সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, আত্মহত্যা প্ররোচনার এই মামলার মূল আসামী বিদেশ থাকে। মামলাটি আমরা তদন্ত করতেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post