স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। ফলে বুধবার থেকে তীব্র চাপে পড়েছেন পেদ্রো সানচেজ। এটা তার জন্য নতুন একটি আঘাত হিসেবে এসেছে। কারণ, করোনা মহামারিকালে ফেস মাস্ক কেনার সময় দুর্নীতির অভিযোগে বড় রকম চাপে রয়েছে তার বামপন্থি সরকার।
অনলাইন সংবাদভিত্তিক সাইট ইএল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট প্রকাশ করে যে, বেসরকারি বেশ কিছু কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার জন্য বেগোনা গোমেজের বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তদন্তকারীরা। ওইসব কোম্পানি সরকারি তহবিল পায় অথবা সরকারি কাজের চুক্তি পায়। এ খবর প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পরে আদালত বেগোনা গোমেজের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দল ডানপন্থি পপুলার পার্টির (পিপি) পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। তার স্ত্রীর ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততার অভিযোগ বেশ কয়েক মাস ধরে করে আসছে এই দলটি।
মাদ্রিদের আদালত সংক্ষিপ্ত এক রায়ে বলেছে, বেগোনা গোমেস দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হচ্ছে। আদালত আরও বলেছে, এই তদন্ত হবে গোপনীয়তা বজায় রেখে।
ম্যানোস লিম্পিয়াস (ক্লিন হ্যান্ডস)-এর অভিযোগের পর ১৬ই এপ্রিল এই মামলাটি সচল হয়। এল কনফিডেন্সিয়াল বলেছে, বেগোনা গোমেজ স্পেনের পর্যটন বিষয়ক গ্রুপ গ্লোবালিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। আবার এই গ্রুপটি এয়ারইউরোপার মালিক।
তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বেগোনার। রিপোর্টে আরও বলা হয়, তিনি ওই সময় দু’বার গ্লোবালিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভিয়ার হিদালগোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। করোনা সংকটের সময় বিমান চলাচল যখন বন্ধ রাখা হয়, তখন এই প্রতিষ্ঠানটিও অন্যদের মতো আর্থিক সংকটে পড়ে।
সেই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছিল তখন এই বিমান সংস্থা। ওই সময় বেগোনা গোমেজ আইই আফ্রিকা সেন্টার চালাচ্ছিলেন। এটি হলো মাদ্রিদের ইনস্টিটিউটো ডি এম্প্রেসা (আইই) বিজনেস স্কুলের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
সেখান থেকে তিনি ২০২২ সালে কাজ ছেড়ে আসেন। এল কনফিডেন্সিয়াল বলেছে, ২০২০ সালে গ্লোবালিয়ার সঙ্গে একটি স্পন্সরশিপ চুক্তি স্বাক্ষর করে আফ্রিকা সেন্টার। তখন কোম্পানিটির অফিসে জাভিয়ের হিদালগোর সঙ্গে একটি প্রাইভেট মিটিং করেন বেগোনা গোমেজ। তখন সরকারের সঙ্গে মাল্টি-মিলিয়ন ইউরোর বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে দেন-দরবার করছিল গ্লোবালিয়া।
গত মাসে গ্লোবালিয়া ওই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছে, হিদালগো এবং বেগোনা গোমেস মাদ্রিদ অফিসে ২৪ এবং ১৬ই জুলাই সাক্ষাৎ করেছেন। ওই দুটি তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী সানচেজের সরকার ৩রা জুলাই ঘোষণা করে যে, তারা কোভিডের কারণে যেসব প্রতিষ্ঠান খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বেইলআউটের জন্য একটি ১০০০ কোটি ইউরোর তহবিল সৃষ্টি করবেন।
এর চার মাস পরে তার মন্ত্রিপরিষদ এয়ার ইউরোপাকে টিকিয়ে রাখতে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর লাইফলাইন অনুমোদন করে। এটাই প্রথমবার স্প্যানিশ এই কোম্পানিটি এমন অর্থ পেলো।
একটি সরকারি চুক্তির দরপত্রে যৌথ উদ্যোগে সুবিধা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী গোমেজের সমর্থন বিষয়ক দুটি চিঠির বিষয়েও তদন্ত করছে তদন্তকারীরা। এই যৌথ উদ্যোগের প্রধান শেয়ারহোল্ডার ছিলেন কনসালট্যান্ট কার্লোস বারাবেস। গোমেজ পরিচালিত মাদ্রিদে কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সিটির সঙ্গে তার আছে সম্পর্ক। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের এড়িয়ে কাজের কন্ট্যাক্ট পেয়ে যায় তারা। এর মূল্যমান এক কোটি দুই লাখ ইউরো।
এসব অভিযোগ সামনে নিয়ে আইনজীবী মিগুয়েল বার্নাডের মাধ্যমে মামলা করেন ম্যানোস লিম্পিয়াস। একটি বড় কোম্পানিকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে প্রথমদিকে চার বছরের জেল দেয়া হয় বারনাদকে। কিন্তু তথ্যপ্রমাণের অভাব থাকায় গত মাসে তাকে বেকসুর খালাস দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
এসব অভিযোগ ওঠার পর বুধবার পার্লামেন্টে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। তখন তিনি এমপিদের বলেন, সবকিছু সত্ত্বেও স্পেনের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমার বিশ্বাস আছে।
পিপির সিনিয়র একজন কর্মকর্তা এস্টার মুনোজ বলেছেন, এটা জরুরি বিষয় ছিল। তার (প্রধানমন্ত্রী) পরিবারের বিরুদ্ধে আদালত তদন্ত করছে। স্পেনের জনগণের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। এটাই যথেষ্ট।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post