স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেই কেবল ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক হতে পারে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী । শিগগিরই ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী সবশেষ দেশ হতে যাচ্ছে সৌদি আরব-এমন গুঞ্জনের মধ্যেই তিনি এ মন্তব্য করলেন।
শুক্রবার (৪-ডিসেম্বর) প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদি বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের জন্য শান্তি চুক্তি হতে হবে। যে চুক্তিতে সম্মানজনক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং কার্যকরি সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা থাকবে। অবশ্যই তা ফিলিস্তিনিদের মনঃপুত হতে হবে। বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে ইতালির রাজধানী রোমে বার্ষিক মিড-২০২০ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনলাইনে দেওয়া ভাষণে প্রিন্স ফয়সাল এ কথা বলেন।
১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়টি সৌদি আরব বিবেচনা করবে বলেও জানান প্রিন্স ফয়সাল। তিনি বলেন, অবশ্যই আলোচনার ভিত্তিতে চুক্তি হতে হবে।
তবে এ মুহূর্তে চুক্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনকে আলোচনার টেবিলে ফেরানো সবেচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে তথাকথিত আবরাহাম চুক্তিতে সই করে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন।
আরো পড়ুনঃ ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে যুক্তরাজ্যে
দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রস্তাবের সঙ্গে আরব শান্তি পদক্ষেপের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ২০০২ সালে সৌদি আরব ওই পদক্ষেপ ঘোষণা করে। যেখানে ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিকের আহ্বান জানানো হয়।
তবে শর্ত হলো- গোলান মালভূমি, পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিত তীরসহ ১৯৬৭ সালে দখল করে নেওয়া আরব ভূমি থেকে ইসরাইলকে সম্পূর্ণভাবে সরে যেতে হবে। আরব লিগও সেই পদক্ষেপকে বছরের পর বছর ধরে পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে। কিন্তু কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। ফিলিস্তিনের ভূমি দখল এবং পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।
আরো পড়ুনঃ ওমানে অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চুক্তিতে মধ্যস্থতা করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনের ভূমিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা স্থগিত করে ইসরাইল। চুক্তিকে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং ফিলিস্তিনের জনগণের পিঠে ছুরিকাঘাত বলে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান দেশটির কর্মকর্তারা।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সৌদি আরবের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ বলে জানান প্রিন্স ফয়সাল। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের মরক্কোর ফেজ শহরে সর্বপ্রথম বিষয়টি আলোচনায় তুলেছিলেন তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স ফাহাদ।
আমাদের এখনো সেই আগের দৃষ্টিভঙ্গি। ইসরাইলের এ অঞ্চলের স্বাভাবিক অংশে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক।
আরো পড়ুনঃ মুক্তি পেলেন হুথিদের হাতে জিম্মি ৫ ওমান প্রবাসী বাংলাদেশী
এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক মুসলিম দেশ কাতার ও তাদের অবস্থান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সৌদি প্রিন্স ফয়সালের কয়েক ঘণ্টা আগে আবরাহম চুক্তি নিয়ে মিড-২০২০ সম্মেলনে ভাষণ দেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আলদুল রাহমান আল থানি।
তিনি বলেন, এসব চুক্তি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে না। কাতার এবং ইসরাইলের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের মূলে ফিলিস্তিন ইস্যু থাকতে হবে বলে জানান তিনি।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আরব শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষা এবং স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে অন্যান্য দেশের সঙ্গে অংশ নেবে কাতার। এ মুহূর্তে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক সম্ভব না। এ প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো মূল্য রাখবে না।
আরো পড়ুনঃ কুয়েত প্রবাসীদের দারুণ সুখবর
ফিলিস্তিনিদের উন্নয়ন এবং তাদের কাছে সহায়তা সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য ইসরাইলের সঙ্গে কাতারের একটি ওয়ার্কিং রিলেশন রয়েছে। থানি বলেন, এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনি ভাইদের পাশে থাকার জন্য ওই সম্পর্কই যথেষ্ট। সূত্র: আল জাজিরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post