ফ্রান্সে আশ্রয় নিতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অগণিত মানুষ আবেদন করেন। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের পূর্ণাঙ্গ আশ্রয় পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)।
আদালতের জনসংযোগ বিভাগ অনুসারে, গত বছর প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয় আবেদনের বিরুদ্ধে মোট আট হাজার ১২১ বাংলাদেশী আশ্রয়প্রার্থী অ্যাসাইলাম কোর্টে আপিল করেছেন বলে দেখা যায়।
ইনফো মাইগ্রেন্টসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্রান্সে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথমে শরণার্থী এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য ফ্রান্সের অফিসে তাদের আশ্রয়ের আবেদন জমা দেয় (অফপ্রা) ।
অফপ্রা কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল অ্যাসাইলাম ট্রাইব্যুনালে (সিএনডিএ) আপিল করার সুযোগ রয়েছে। আদালত প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আশ্রয় আদালতে মোট ৬৪ হাজার ৬৮৫টি আপিল আবেদন জমা হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বেশি।
তবে একই সময়ে আদালত গত বছরের আবেদনসহ মোট ৬৬ হাজার ৩৫৮টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে। প্রতিটি আপিল শেষ করতে সিএনডিএ গত বছর সময় নিয়েছে গড়ে ছয় মাস।
এত বিপুল সংখ্যক আবেদনের মধ্যে সর্বোচ্চ আট হাজার ১২৫টি আপিল আবেদন জমা করেছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাত হাজার চারটি আবেদন করেছেন তুরস্কের আশ্রয়প্রার্থীরা। এছাড়া পাঁচ হাজার ৪৯৬টি আবেদন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে আফগান আশ্রয়প্রার্থীরা। সুরক্ষা পেয়েছেন ২০ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থী
২০২৩ সালে মোট ১৩ হাজার ৬০৬ জন ব্যক্তি জাতীয় আশ্রয় আদালত থেকে শরণার্থী মর্যাদা অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেয়েছেন, যা সিদ্ধান্ত দেওয়া মোট আবেদনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
তাদের মধ্যে নয় হাজার ৪৬২ জন ব্যক্তি জেনেভা কনভেনশনের আওতায় রিফিউজি স্ট্যাটাস বা শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন। বাকি চার হাজার ১৪৪ জন আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপীয় কনভেনশন অনুসারে সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা অস্থায়ী সুরক্ষা পেয়েছেন।
আদালতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বা সুরক্ষা পাওয়ার দিক দিয়ে শীর্ষে আছে সিরিয়া, ইরান এবং ইউক্রেন থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা। বাংলাদেশিদের সুরক্ষা পাওয়ার হার ১১%
গত বছর আট হাজার ১২৫ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী সিএনডিএ তে আপিল আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত পেয়েছেন ছয় হাজার ১৬৮ জন ব্যক্তি।
আর তাদের মধ্যে সুরক্ষা পেয়েছেন ৬৯০ জন আশ্রয়প্রার্থী। অর্থাৎ মাত্র ১১.২ শতাংশ ব্যক্তি রিফিউজি স্ট্যাটাস অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেয়েছেন। ২০২২ সালেও এই হার একই ছিল। বাংলাদেশিদের মধ্যে নারী আশ্রয়প্রার্থীদের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার হার (২০.৫%) এবং পুরুষদের (১০.৭%) প্রায় দ্বিগুণ৷
বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অফপ্রার-এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কিন্তু সুরক্ষার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ফ্রান্সের জাতীয় আশ্রয় আদালতের সর্বশেষ দেশভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে।
গত বছর থেকে অনেক বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে অভিযোগ করে আসছে অনেক আশ্রয় আবেদন আদালত শুনাই ছাড়াই প্রত্যাখান করে আসছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং কোভিড-পরবর্তী নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো উল্লেখযোগ্য সমস্যা রয়েছে দেশে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post