ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এখন ইসরায়েল পাল্টা হামলা করবে নাকি অন্য কোনো পথে হাঁটবে তা নিয়ে চলছে নানা সমিকরণ। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
এতে বলা হচ্ছে- ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলার গোপন ছক কষছে। ইরান থেকে ৭০ হাজার অনুসারী বের হওয়ার কথা রয়েছে। ইরান যেসব মিসাইল ছুড়েছিল তার বেশকিছু ভূপাতিত ইসরায়েল। ইসরায়েলে পক্ষে সৌদি আরব কাজ করেছে বলেও জোর আলোচনা চলছে।
যদিও সৌদি আরব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আবার সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, তারা ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।
অন্যদিকে, আল্ট্রা অর্থড্রক্স ইহুদিদের একটা শাল নিয়ে কথা উঠেছে। বলা হচ্ছে, তারা যে শালটি পরে সেটি দেখলেও বোঝা যায় যে, ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে। ইসরায়েল তাদের সেনাবাহিনীতে অন্যতম একটা পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছে।
প্রথমে আমাদের দেখতে হবে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনোরকম ভেতরে ভেতরে বন্ধুত্ব আছে কিনা, এটা অনেকে বলার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে যারা সুন্নি তারা বলে থাকেন।
ইতিহাস বলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের বরাবরের মতো ভালো সম্পর্ক ছিল সেই ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। সুতরাং, প্রথমে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন ইরান স্বীকৃতি দেয়। পরে দুটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। তখন ইরানের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী। তিনি ওয়েস্টার্ন ব্যাকড একজন নেতা, তিনি ওয়েস্টার্নদের পক্ষে কাজ করেন। তখন ইসরায়েল ইরান একে অপরকে সাহায্য করত। ইরানকে ইসরায়েল কৃষিকাজে সহায়তা করত। তাদেরকে সেনাদের ট্রেনিং দিত। এমনকি ইসরায়েল ইরানের যে আর্মড ফোর্সেস রয়েছে, তাদেরকেও ট্রেনিং দিত। বিনিময়ে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী ইসরায়েলকে তেল দিতেন। কারণ, ইসরায়েলের তেল দরকার।
এরই মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে যায়। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি তার যে অনুসারী ধরা হয়, তারা ১৯৭৮ সালে রেক্স সিনেমা হল পুড়িয়ে দেন। তখন রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে ইসলামিক রেভ্যুলেশন তৈরি হচ্ছিল। সে সময় থিয়েটার পোড়ানোর ঘটনায় ৩৭৭ জন মারা যান। তখন পৃথিবীজুড়ে একটি ত্রাস সৃষ্টি হয়। তখন ইরানে থাকা ইহুদিরা নড়েচড়ে বসে। তারা মনে করে- সামনে তাদের বিপদ দেখা যাচ্ছে।
ইরান একসময় ইসরায়েলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল যদিও এখনো প্রায় ২০ হাজারের উপরে সেখানে রয়েছে। তো এসব ঘটনার পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ক্ষমতা নিয়ে নেয় কখন তার সাথে ইহুদিদের একটা চুক্তি হয়। চুক্তিটা কেমন ছিল একেবারে প্রকাশ্যে স্পষ্ট তো বলে দেয়া হয়, তোমরা যদি ইরানে থেকে কোন গুপ্তচর বৃত্তি ইসলামিক রেভুলেশনের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করো তোমাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। ৩৭৭ জন যে আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেছিল ঠিক সেটারই ইঙ্গত দেওয়া হয়েছিল।
তখন তারা রাজি হয়ে যায়, তখন তারা ভয়ে ভয়ে ইরানে থাকতে থাকতে শুরু করে। এরপরের সাথে ইজরাইলের একটা দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। তখন যখন ইরান ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা শুরু করে। অনেকেই বলে এই ইরান ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছে তারা মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি মেজরিটি তাদের সমর্থন আদায় করতে চায় এবং ইসলামিক ওয়ার্ল্ডে ইরান নেতৃত্ব দিতে চায়। যদিও অনেকে এটি এপ্রোচ করে ইরান এটি মন থেকে হয়তোবা করছে। এর পরবর্তী যে স্টেজ, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের যে দ্বন্দ্ব, ১৯৮২ সালে যখন সাউদার্ন লেবাননে ইসরায়েল তাদের সৈন্য পাঠায়।
যখন সে দেশে গৃহযুদ্ধ বেধে যায় এবং তখন ইরান তাদের সৈন্য পাঠিয়ে দেয় সেখানকার যারা শিয়া রয়েছে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য তখন দ্বন্দ্ব চরমে চলে যায়। তখন সারা বিশ্বব্যাপী দেখা যায় ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে দা কুমড়া সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। ইন দ্য মিন টাইম, ইরান তলে তলে ইসরায়েলের চারিদিক থেকে রিং অফ এনিমিজ তৈরি করতে থাকে। এটা কেমন যেমন আপনি দেখেছেন যে, যেখানে শিয়া স্বার্থ রয়েছে সেখানে ইরান ফান্ডিং করে এবং ইজরায়েলের চতুর্দিকে যেমন ইয়েমেনে রয়েছে, লেবাননে হুতি হিজবুল্লাহ ও গাজায় হামাস। সবাইকে ইরান ফান্ডিং করে।
অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। এছাড়াও ইরাক সিরিয়া লিবিয়া সবখানে ইসরায়েল বিরোধী যেসব জোট রয়েছে পৃষ্ঠপোষকতা করে ইরান। এটা ইজরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। ইসরায়েল কিন্তু বসে নেই, তারা কি করছে একের পর এক এই দেখেন হাসান নাসরুল্লাহর পাশে সোলাইমানি সাম্প্রতিক যা হামলা হয়েছে তারপরে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে দেখাচ্ছে। তারা কিন্তু একের পর একই কাজগুলো করে যাচ্ছে। ইরানকে পিষে ফেলতে চাইছে। ইরান যতভাবেই তাদের নিউক্লিয়ার অগ্রগতি ধামাচাপা দিতে চাইলেও ইসরায়েল তারা জানে যে ইরান নিউক্লিয়ার অস্ত্র বানানোর দ্বারপ্রান্তে এবং যখনই দেখা যায় যে ইরান একটু এগিয়ে যায় তখন হঠাৎ করে ইজরাইলের হামলা শুরু হয়ে যায়।
ইসরায়েলের সবথেকে বেশি ভয় হয় ইরান আমেরিকার সঙ্গে যখন কোন বৈঠকে বসে। তারা মনে করে যে, আমেরিকার সঙ্গে তাদের কোন আঁতাত হয়ে যেতে পারে। রয়টার্সে একটা রিপোর্ট পাবলিশ হয়েছিল, মাত্র পাঁচজন আমেরিকান বন্দী ছিল ইরানের কাছে তাদেরকে ছয় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দিয়েছিল এবং ইরানকে বলা হচ্ছিল তারা এই ভাবেই পশ্চিমাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। সাম্প্রতিক খবর হলো, ইসরায়েল ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে ইরানের যেসব নিউক্লিয়ার সাইটস্ রয়েছে সেগুলোতে আক্রমণ করবে যেকোনো মুহূর্তে। ইরানকে কিন্তু ইসরায়েল অনেক ভাবে আটকিয়ে রাখতে চাইছে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্ট্রাইক করা, অভ্যন্তরীণ সমস্যা তৈরি করা। আপনারা দেখবেন ইরানে কিছুদিন পরপর হিজাব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সেখানকার রিলিজিয়াস পুলিশ রয়েছে সেটা সামাল দিতে হিমশিম খায়। এমনকি সাম্প্রতিক সময় দেখা গেছে, ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আজাদিয়া স্কয়ার সেখানেও তাদের যে ইসলামিক রেভ্যুলেশন তার বিপক্ষে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তার মানে, ইরানের যে সরকার রয়েছে সে বড় ধরনের বিরোধিতার মুখে রয়েছে। চলমান সময়ের কিছু ঘটনা যদি আপনাদের দেখায় তাহলে অবাক হয়ে যাবেন, সেখানকার দ্বন্দ্ব কতটা মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে।
আপনারা দেখেন যে, ফয়েজা হাশেমি রাফসানজানি ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানির মেয়ে। তিনি একটি লজিক দেখিয়েছেন, বলছেন যে ইরান উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন করা চায়নার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে, রাশিয়ায় মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে কিন্তু একই কথা বলে ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন করছে ইসরায়েল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কেন ভাল করছে না এতে তিনি অবাক হচ্ছেন। এদিকে আরেকজন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক সাদেক জিবাকালাম উনি কিন্তু বলছেন যে, ইরানের চেয়ে ইসরায়েল বিরোধী পলিসি রয়েছে সেটাকে বাতিল করা উচিত। কারণ, এই কারণে ইরান সারা বিশ্বব্যাপী এক ঘরে হয়ে গিয়েছে।
তাদের জনগণ কি আসলে তাদের কথা সমর্থন করে নাকি তারা ইসলামিক যে রেভ্যুলেশন রয়েছে তাদের পক্ষে রয়েছে। ব্যাপারটা কি ওটাও কিন্তু নড়েচড়ে বসছে। কেন দেখেন, সাম্প্রতিক সময়ে একটি তথ্য দেই, গত ঈদে ইরানের যারা সুন্নী মুসলিম রয়েছে তারা ঘোর আপত্তি জানিয়েছে ইরানের কারেন্ট যে রেজিম রয়েছে তার বিপক্ষে। কারণ, সেখানে তাদের বলা হচ্ছে যে আমাদের যে রাইটস রয়েছে তা আমরা পরিপূর্ণ রূপে পাচ্ছিনা। কোনরকম সুন্নি আলাদা কোন মসজিদ নেই, বিভিন্নভাবে তাদের উপর দমন নিপীড়ন চলে তা একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে।
মূল জনসংখ্যার ১০ শতাংশ কিন্তু সুন্নি মুসলিম। এসব সুন্নি মুসলিমদের দেখা যাচ্ছে তারা বিরোধী। ওদিকে সম্প্রতি ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের উপর যে আক্রমণ হয়েছে সেটাই কি সমর্থন করে কিনা সেখানে দুই ভাগে বিভক্ত। আরেকটি রিপোর্টে দেখা গেছে, ইরান যে হামলাটা চালিয়েছে তার সেই দেশের অধিকাংশ জনগণ সমর্থন করছে না। স্টিক ইসলামিক রুলস যারা চাচ্ছে না তারা কোনভাবে এটা সমর্থন করছে না। কারণ তাদের পশ্চিমাদের সঙ্গে ওঠা-বসা রয়েছে এবং ইসরায়েলের পক্ষেও একটি বড়সড় জোটের উত্থান হচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে একটি মারাত্মক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে ইসরায়েলে দেখা যেতো যে সেকুলার জনগণ ছিল তারাই সেখানকার আর্মিতে মেজরিটি কিন্তু এখন তারা বলছে আর্মিতে আরো জনগণ দরকার এবং একইসঙ্গে তাদের ফার রাইট গর্ভমেন্ট তারা আল্ট্রা অর্থড্রক্স যে ইহুদি রয়েছে তাদেরকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করছে যদিও অনেক রাবাইরা বলছেন যে আল্ট্রা অর্থড্রক্স যে ইহুদিরা হচ্ছেন হিন্দুদের ব্রাহ্মণদের মতো। ওরা শুধুমাত্র ধর্ম-কর্ম করবে ওরা কেন এসব কাজে যাবে। রাবাইরা দুটি অবজেকশন দেখিয়েছে, আর্মিতে গেলে নারীদের সঙ্গে মিশতে হতে পারে। আরেকটি হলো সমকামী বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মিশতে হতে পারে। এজন্য তাদের ধর্মীয় অবক্ষয় হতে পারে। এটা যদি চেক দিতে পারে তাহলে আর কোন সমস্যা নেই। কোন আপত্তি নেই। তো সেভাবে কিন্তু তাদেরকে বর্তমানে ইসরায়েলে যে আর্মি রয়েছে ও আইডিএফ রয়েছে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর মানে তারা কিন্তু ধর্মীয় বিষয় নিয়ে খুবই জ্ঞাত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post