ইসরায়েলের মাটিতে শত শত ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও দ্রুত গতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জেরে প্রতিশোধমূলক এই পদক্ষেপ নেয় ইরান।
সংযত যুক্তরাষ্ট্র—
ইরানের এই হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এ সময় বাইডেন নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দেন, আমেরিকা ইরানে পাল্টা হামলায় অংশ নেবে না, এমনকি পাল্টা হামলায় সমর্থনও দেবে না। তার মতে, পাল্টা হামলা ওই অঞ্চলে আঞ্চলিক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।
তিনি নেতানিয়াহুকে বলেন, আপনি বিজয় পেয়েছেন এবং তা ধরে রাখুন। একথা বলার পর নেতানিয়াহু বাইডেনকে বলেন যে, তিনি বুঝে গেছেন। খবর- এক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল।
আরো কঠোর হওয়ার হুমকি ইরানের—
এদিকে, ইরান জানিয়েছে ইসরায়েলি অপরাধের জন্য এই হামলা একটি সতর্কবার্তা। বড় ধরনের সামরিক অভিযান না হলেও ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের জন্য এককালীন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এটি। তবে ইরানের এ হামলার কোনো প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করা হলে আরো বড় ধরনের পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাইসি প্রশাসন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি দূত মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরানের সামরিক পদক্ষেপ মূলত দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইহুদিবাদী শাসকের আগ্রাসনের জবাব। বিষয়টি এখানেই শেষ বলে গণ্য করা যেতে পারে।
তবে ইসরাইল যদি আরেকটি ভুল করে তাহলে ইরানের প্রতিক্রিয়া আরো কঠোর হবে।
ইরানের সক্ষমতা—
ইসরায়েলে ইরানের এত বড় হামলার বিষয় কেউ ধারণা করতে পারেনি। ইকোনমিস্ট লিখেছে, ইসরাইলের মিলিটারি এক্সপার্ট রা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন যে ইরান সরাসরি আক্রমণ করবে না। ম্যাগাজিনটি লিখেছে এমন বড় আকারের আক্রমণ ইসরাইলের ভাবনার বাইরে ছিল।
ইরানের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসরাইলের একটি বিমান ঘাটি। যেখান থেকে সিরিয়াতে ইরানের কনসুলেটে আক্রমণ করা হয়। সেই ঘাটির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটা একটি বড় বার্তা। ইরান যে সরাসরি ইসরাইলের বিমান ঘাটিতে আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে এটা একটি বড় ঘটনা।
যে কারণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এক হয়েও ইরানে হামলা সহজ নয়—
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি। প্রায় ৫ লাখ ৮০ হাজার সক্রিয় সৈন্য এবং দুই লাখ প্রশিক্ষিত রিজার্ভ। মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশটির মিলিশিয়া বাহিনী। এছাড়া ইরানের মিত্র দেশ চীন, রাশিয়ার সহায়তা তো আছেই।
ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়েও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা সহজ হবে না। এ পর্যন্ত আরবদের সঙ্গে যত যুদ্ধ করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ হবে এই যুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ইরানে এই সময় আক্রমণ করা সহজ না। কারণ সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এর ভৌগলিক অবস্থান। পৃথিবীর ইতিহাসে ইরান সব সময়ই বড় শক্তি ছিল এর ভৌগলিক কারণে। সমুদ্রে, আকাশ পথে এবং স্থলে তিন দিক দিয়েই ইরানে আক্রমণ করা কঠিন।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাওয়ার কারণে আরো কঠিন হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে একটা বিশ্লেষণ ছিল- স্থল পথে ইরানে আক্রমণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ লাখ সৈন্য দরকার হবে, যা ইরাকে আক্রমণে যে সৈন্য সংখ্যা ছিল তার দশ গুণ।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যুদ্ধ বাধলে ইরান হরমুজ প্রণালী যদি বন্ধ করে দিতে পারে, তাহলে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ভেঙে পরবে।
ধারণা করা যাচ্ছে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post