পরিবার ও নিজের সুখের কথা চিন্তা করে জমিজমা বিক্রি করে লিবিয়ায় পাড়ি জমানো রাকিবুল ইসলাম, আলামিন মিয়া, আল আমিন ও হাফিজুর রহমান নামের চার যুবক অপহরণের শিকার হয়েছেন।
অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে প্রবাসী ওই চার যুবকের বাড়িতে বার্তা পাঠিয়েছে অপহরণ চক্রের সদস্যরা। মুক্তিপণ না পাওয়ায় দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তাদের পরিবার।
অপহরণের শিকার ওই চার শ্রমিক হলেন- লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আল আমিন (২৩), জয়নাল আবেদিনের জামাতা ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙার ইদ্রিস আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪০), রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে আল আমিন (২২) এবং তার খালাতো ভাই ও পঞ্চগ্রামের রামরাম গ্রামের শাহিনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৪)। তারা লিবিয়ার বেনগাজিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
অপহরণের শিকার যুবকদের পরিবার জানায়, পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে একই এলাকার বাসিন্দা লিবিয়া প্রবাসী মিজানের মাধ্যমে লিবিয়ায় ওই চার যুবক। লিবিয়ায় গিয়ে শুরুতে মিজানের সাথে কাজ করলেও চুক্তি অনুযায়ী টাকা না মেলায় ৪ জনই আলাদা কাজ শুরু করেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলা শুরু হয়েও সুখের দেখা পাওয়ার আগেই অপহরণের শিকার হন ওই চার প্রবাসী।
অপহরণের শিকার যুবক আল আমিনের বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, তিন বছর আগে জমিজমা বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে একমাত্র ছেলে আল আমিনকে লিবিয়ায় পাঠান। ছেলের সঙ্গে তার জামাতা হাফিজুল ইসলামও লিবিয়ায় যান। তিন বছরে কোনো সমস্যা না হলেও চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল ৮টায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তার ইমো নম্বরে ফোন করেন।
এ সময় জানানো হয়, তার ছেলে আল আমিন ও জামাতা হাফিজুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তির জন্য এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। তা না হলে তাদের দুজনকে হত্যা করা হবে মর্মে হুমকি দেওয়া হয়। ছেলে ও জামাতা অপহরণের শিকার হওয়ার কথা জানার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আলেয়া বেগম।
অপহরণের শিকার যুবক হাফিজুরের স্ত্রী জয়নব বেগম (৩০) বলেন, আমার স্বামী ও আমার একমাত্র ভাই লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছে। মুক্তিপণ না দিলে স্বামী ও ভাইকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। কি করবো কিছু বুঝতেছিনা। পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ভীম শর্মা গ্রামের আরেক আল আমিন দুই বছর আগে লিবিয়ায় কাজে যান।
আল আমিনের বড় ভাই লিটন মিয়া (২৩) বলেন, গত ১১ মার্চ সকাল আনুমানিক ৭টা ৫১ মিনিটে লিবিয়া থেকে আমার নম্বরে ফোন করে জানানো হয় যে আমার ভাই আল আমিন, খালাতো ভাই রাকিবুল, সিন্দুরিয়া গ্রামের আরেক আল আমিন, তার ভগ্নিপতি হাফিজুলকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদেরকে জীবিত দেখতে চাইলে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দিতে হবে।
আইনের আশ্রয় নেওয়া হলে তাদের হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। লিটন মিয়া আরও বলেন, অপহরণের পেছনে পঞ্চগ্রামের সিন্দুরিয়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফের লিবিয়া প্রবাসী ছেলে মিজানুর রহমান, একই ইউনিয়নের রামরাম গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী মো. নাজমুল হুদা (২৩) এবং একই গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী মো. সুলতান (৩২) কোনো না কোনোভাবে জড়িত রয়েছেন।
এদিকে, অনলাইনের মাধ্যমে এ ঘটনায় অভিযুক্ত মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপহরণের বিষয়টি শুনেছেন তবে অপহরণের সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে দাবি করেন। মিজান বলেন, লিবিয়ায় আসার পর আমার সাথে কাজ শুরু করলেও তারা সবাই আলাদা কাজ করে। তিনিও অপহরণ হওয়া চার যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন।
তবে এ ঘটনায় প্রবাসী মিজানকে আসামি করে লালমনিরহাট সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে অপহরণের শিকার যুবকদের স্বজনরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post