হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনের আড়ালে ডলার, স্বর্ণ পাচারসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েছেন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিমানবন্দর বহির্গমন টার্মিনালের ভেতর শুল্কমুক্ত দোকান ও পরিবহন কাউন্টার ঘিরেও চলছে নানা অনিয়ম। এতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। আর এর নেপথ্যে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বিমানবন্দরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানান, যাত্রীসেবার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অনুমোদিত ছয়টি বেসরকারি পরিবহন কাউন্টার আছে বিমানবন্দরে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পাঁচটি ও অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে একটি কাউন্টার। এসব কাউন্টার ঘিরে বেবিচকের বৈধ পাসধারী পরিবহনকর্মীর পাশাপাশি সক্রিয় রয়েছে একটি দালাল চক্র।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা বিমান থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ শেষে গন্তব্যে পৌঁছতে কার পার্কিং এলাকায় আসামাত্র চক্রটির খপ্পরে পড়েন। তাদের টানাহ্যাঁচড়ায় যাত্রীরা অতিষ্ঠ। এ সময় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়।
বিমানবন্দর এভিয়েশন পরিবহন কাউন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, বেবিচকের অনুমোদিত পরিবহন কাউন্টার থেকে গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছাতে কোনো যাত্রীকে ভাড়া নিয়ে হয়রানি করার সুযোগ নেই। কারণ ভাড়ার নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। রিসিটের মাধ্যমে ভাড়া কাটা হয়।
তবে তিনি স্বীকার করেন বিমানবন্দরে বহিরাগত কিছু গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি ঘিরে দালাল চক্র সক্রিয়। এদিকে বিমানবন্দরে র্যাপিং মেশিন কর্মীদের হাতেও হয়রানির শিকার হন যাত্রীরা।
লাগেজ নিয়ে গেট দিয়ে টার্মিনালের ভেতর প্রবেশ করার সময় গেটে থাকা এক শ্রেণির কর্মী যাত্রীদের লাগেজ র্যাপিং করার জন্য বাধ্য করেন। এ জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীরা বিমানবন্দরে এ হয়রানির শিকার বেশি হন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানেও চক্রটির হয়রানি বন্ধ হয়নি।
নানা অনিয়মের কারণে বিমানবন্দরে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৯ কর্মকর্তাসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের মধ্যে মানি এক্সচেঞ্জের দু’জন মালিকও রয়েছেন।
ডলার পাচারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি অভিযান পরিচালনা করে দুদক। এ সময় দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের অধিকাংশ বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জ বুথে কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না।
অসাধু কর্মকর্তারা ভাউচার না দিয়েই বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ডলার নিয়ে বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছে। তা ছাড়া স্বাক্ষরবিহীন ভুয়া ভাউচারও দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে ডলার কেনাবেচার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করছে না।
এ ব্যাপারে বেবিচক সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর এ এস এম আতিকুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি করলে কেউ ছাড় পাবেন না। তিনি জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানিসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিমমিত বৈঠক হয়। অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post