তুরস্কে সেনাবাহিনীর অধীনে লোক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের প্রধানসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বাবা কামরুল হাসান (৬৫) ও ছেলে মো. ফাহাদ হাসান সিয়াম (২৭)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ কর হয়।
শনিবার (৩০ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর মিন্টু রোড নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার দুই জনের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা সহিদুল ইসলামের। পরিচয়ের এক পর্যায়ে কামরুল হাসান সহিদুলকে প্রস্তাব দেয় তুরস্কে সরকারিভাবে সেনাবাহিনীর অধীনে অনেক লোক নিয়োগ করা হবে, তাকে সেখানে তিনি পাঠাতে পারবেন। তুরস্কে গিয়ে সে এই চাকরি করে ভালো বেতন পাবে। কামরুল হাসানের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় সহিদুল। তবে তুরস্কে যেতে সহিদুলকে সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায় কামরুল হাসান। প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন লাখ টাকা সহিদুল কামরুল হাসান ও তার ছেলে সিয়ামকে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৭ মে কামরুল হাসান ও তার ছেলে সহিদুলসহ এরকম ২০ জনের কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। টাকা দেওয়ার পর তাদের মেডিকেল করানো হয়। মেডিকেল করানোর কিছুদিন পর কামরুল হাসান ও তার ছেলে এই ২০ জনকে তুরস্কে যাওয়ার ভুয়া জব অফার লেটার দেয়।
তিনি বলেন, এর কিছুদিন পর কামরুল ও সিয়াম সহিদুলসহ বাকি ২০ জনকে বলে এখন তুরস্কে পাঠানো যাবে না। তাই তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া ও সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এই কথা বলে কামরুল ও সিয়াম তাদের কাছ থেকে আরও ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাউকেই বিদেশ পাঠাতে পারেনি কামরুল ও সিয়াম। একপর্যায়ে তারা ওয়ারীর অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়। মূলত ওয়ারীর অফিসেই টাকার লেনদেন হয় ভিকটিম ও কামরুলের মধ্যে। পরে সহিদুলের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বাবা কামরুল ও ছেলে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যেভাবে প্রতারণা করত তারা
ডিবি প্রধান বলেন, কামরুল ও তার ছেলে সিয়াম ভিকটিমদের কাছে বলতো তারা ৪-৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্সধারী। প্রকৃতপক্ষে তাদেরর কোনো লাইসেন্স নেই। ভুয়া লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে তারা। এছাড়াও তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারিভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টদের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। এগুলো দেখিয়েই পরবর্তীতে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এছাড়াও কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেন। একপর্যায়ে গোপনে তিনি তার অফিস পরিবর্তন করে ফেলেন।
প্রতারক হয়ে ওঠার গল্প
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কামরুল হাসান ১৯৯৮ সাল থেকে ১০ বছর মালয়েশিয়ায় কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সালে থেকে আল-রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকির করেন। ২০২২ সালে এজেন্সিটির মালিক মারা যাওয়ার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন।
এভাবে প্রতারণা করে তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ জন বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নেন এবং তাদেরকে মেডিকেল করানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০-৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post