সরকারি চাকরিজীবীদের একহাত নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। মন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, তবে আমি অবাক হয়েছি।
সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। বিদেশে টাকা পাচার করছে- এমন অনেক লোক আছে এবং অনেকে তাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এরমধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ’মিট দি প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কূটনীতিকরা বিদেশে ছয় বছর কাজ করার পরে দেশে ফেরত আসতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘একজন ১২ বছর বাইরে আছে এবং দেশেই আসে না। ঠিক করেছি যে তিন বছরের মধ্যে পরবর্তী পোস্টিংয়ে যেতে হবে এবং ছয় বছরের বেশি হলে দেশে ফেরত আসতে হবে। দেশে আসার পরে দুই বছর থাকার পরে আবার যাবেন।’
বহু কূটনীতিক দুই বছরের জন্য দেশে আসেন এবং তারপরে চলে যান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা বিদেশ অনেক ভালো চেনেন, কিন্তু দেশ চেনেন না।’ চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে কী কাজ হচ্ছে বা রুপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে কিভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা হচ্ছে সেগুলির খবর তারা রাখেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা বিদেশের পাওয়ার প্ল্যান্ট ভালো চেনেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় প্রায় ৭৫ জন বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়েছিলাম এবং এর আগে মাত্র তিন জন সেখানে গিয়েছিল।’ সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের রুপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেখানেও এর আগে মাত্র তিন বা চার জন গেছেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইকোনোমিক ডিপ্লোম্যাসি এবং পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি এই দুটি প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মিশনকে জানিয়েছি এই দুটি জিনিস কীভাবে করা যায় সেটি নিয়ে চিন্তা করেন।’
আরো পড়ুনঃ রহস্যময় ওমানের সুলতান
রাষ্ট্রদূতদের জবাবদিহিতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রদূতরা সংসদীয় কমিটির কাছে প্রেজেন্টেশন দেবেন এবং কমিটির সদস্যরা প্রশ্ন করবেন আগামি তিন বছরে রাষ্ট্রদূতরা কী করতে চায়, সেই বিষয়ে। তাদেরকে (রাষ্ট্রদূতদের) পর্যালোচনা করবো তারা নিজেদের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন সেটির ওপর ভিত্তি করে। আমরা এটি চালু করেছি এবং ইদানীং যারা গেছেন তারা এই হিয়ারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গেছেন।’
রাষ্ট্রদূতরা বর্তমানে দেশে ফিরে এসে ডি ব্রিফিং করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে করে জবাবদিহিতা বাড়ছে।’ সেবা বৃদ্ধির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আ্যপস তৈরি করেছে যা ৩৫ ধরনের সেবা দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ’কাউকে মিশনে আসতে হবে না। একজন বাসায় বা অফিসে বসে এই সেবা পাবে। এটি সহজ নয়। যারা ডেলিভারি করবে তাদেরকে জ্ঞান থাকতে হবে এবং তার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। অন্যদিকে যারা এই সেবা নেবেন তাদেরও এই জ্ঞান থাকতে হবে কীভাবে এই সেবা নিতে হয়। এর ফলে দালালদের উৎপাত কমে যাবে।’
আরো পড়ুনঃ দেশে ফের বন্ধ হতে পারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট
অনুষ্ঠানে ডিআরইউ-এর প্রেসিডেন্ট রফিকুল ইসলাম আজাদ সভাপতিত্ব করেন এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, পররাষ্ট্রনীতি এবং এ সংক্রান্ত সম-সাময়িক ঘটনা নিয়ে ডিআরইউ’র মতবিনিময় অনুষ্ঠানে খোলামেলা কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে যাচ্ছেন, যাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লোক যাচ্ছে এবং মানবেতর জীবনযাপন করছে, এটি খুবই দুঃখজনক। এভাবে গেলে দেশের বদনাম হয়। তাদের অবস্থাও খারাপ থাকে।
যারা বিদেশে লোক পাঠাচ্ছে শুধু তাদের নয়, যারা যাচ্ছে তাদের এবং তাদের পরিবার, যারা তাদেরকে উৎসাহিত করে যাওয়ার জন্য, তাদেরকেও আমরা আইনের আওতায় আনবো। একজন ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে যায়। এই টাকা দিয়ে তারা দেশে ব্যবসা করতে পারতো বলে মনে করেন তিনি।
আরো দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post