বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের নাইস শহরে সন্ত্রাসী হামলায় তিন জন নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ওমান। সেইসাথে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে মুসলিম প্রধান এই দেশটি। বৃহস্পতিবার (২৯-অক্টোবর) ওমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়। ওমান সব ধরণের উগ্রবাদী এবং সহিংসতা ও বিদ্বেষ চর্চাকে প্রত্যাখ্যান করে। বিবৃতিতে ফ্রান্সকে ওমানের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
গতকাল (২৯-অক্টোবর) ফ্রান্সের নিস শহরের একটি গির্জায় ছুরি হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার মধ্যেই ঘটে গেছে আরও দুটো হামলার ঘটনা। যার একটি হয়েছে ফ্রান্সের আভিনিওঁ শহরের কাছে এবং অপরটি সৌদি আরবের ফরাসি কনস্যুলেটে। ফ্রান্সে নিস শহরে হামলার দিন বৃহস্পতিবার সকালের দিকেই এই পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে।
নিস শহরে গির্জায় হামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলীয় আভিনিওঁ শহরের কাছে একটি এলাকায় পুলিশ এক বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে। ওই ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবর’’ বলে বন্দুক নিয়ে পথচারী এবং পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল।
ওদিকে, আরেকটি ঘটনায় সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্রান্সের কনস্যুলেটে এক রক্ষীর ওপর ছুরি হামলার পর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। ছুরির আঘাতে আহত ওই রক্ষীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছে ফরাসি দূতাবাস।
ফ্রান্সের নিস শহরের মেয়র খ্রিশ্চ এস্থুজি গির্জায় হামলার ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। টুইটারে তিনি জানান, শহরের নতর-দাম গির্জার ভিতরে অথবা কাছে ছুরি হামলার ঘটনাটি ঘটেছে।পুলিশ হামলাকারীকে আটক করেছে।
আরো পড়ুনঃ রহস্যময় ওমানের সুলতান
হামলাকারী ছুরি দিয়ে এক নারীর শিরশ্ছেদ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মেয়র জানান, হামলাকারী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করছিল। তাকে আটক করার পরও সে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করে যাচ্ছিল। গির্জার ভিতরে নিহতদের মধ্যে একজনকে গির্জাটির ওয়ার্ডেন বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি মাসের প্রথমদিকে প্যারিসের শহরতলীতে প্রকাশ্য দিবালোকে এক শিক্ষককে গলা কেটে হত্যার ঘটনার ধরনের সঙ্গে এ ঘটনার ধরনও মিলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, এ হামলায় তিন জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী কৌঁসুলির দপ্তর জানিয়েছে, তাদের হামলার ঘটনাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা রয়টার্সের সাংবাদিক জানিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী পুলিশ গির্জার চারদিকে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী বসিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো ঘটনাস্থলে গেছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করছেন। এর আগে ১৬ অক্টোবর প্যারিসের শহরতলীতে ৪৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল পেটিকে শিরশ্ছেদ করে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই দেশটিতে আবার ছুরি হামলায় শিরশ্ছেদের ঘটনা ঘটল।
আরো পড়ুনঃ ইতালি যেতে আবেদন করবেন যেভাবে
ওই শিক্ষক ক্লাসরুমে নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন বলে ফ্রান্সের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছিল। পেটিকে হত্যার পর তার ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো। ম্যাক্রোর ওই বিবৃতির নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ওদিকে, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের নিন্দা করেছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই ফ্রান্সে ফের নতুন হামলা হল।
তবে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কার্টুন প্রকাশের পক্ষ সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর সাম্প্রতিক মন্তব্যে মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে এবং কয়েকদিন ধরেই কিছু দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। কোন কোন দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনেরও ডাক দেয়া হয়েছে।
গতকালের হামলায় নিহতের স্মরণে প্যারিসের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের মাঝখানে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এদিকে দেশটির মুসলিম সংগঠন, ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অফ দ্য মুসলিম ফেইথ নিস শহরে ছুরি নিয়ে চালানো হামলার নিন্দা করেছে। এবং হতাহত ও তাদের পরিবারের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
বিস্তারিত দেখুন বুলেটিনেঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post