২০১৪ সালের ৮ই মার্চ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০।
বিমানটিতে ছিলেন ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য। কিন্তু উড্ডয়নের মাত্র এক ঘণ্টা পরেই রহস্যজনকভাবে বিমানটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২০০৯ সালে ব্রাজিলের উপকূলে এয়ার ফ্রেন্স ফ্লাইট ৪৪৭ এর ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার অভিযান চালায় উদ্ধারকারী দল।
আয়ারল্যান্ডের নতুন রাডার স্যাটেলাইট সিস্টেমের বিশ্বের যে কোনো জায়গায় দুর্ঘটনায় পড়া বিমানের অবস্থান নির্ণয় করার সক্ষমতা আছে। মঙ্গলবার আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি ক্লেয়ারে এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, আইরিশ এভিয়েশন অথরিটি পরিচালিত এই সিস্টেমটি রাডার থেকে বিমানের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি শেষ করবে। এখানে রহস্যময় ১০ বিমান নিখোঁজের ঘটনা তুলে ধরা হলো:-
১. মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০
২৩৯ জন আরোহী নিয়ে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ নিখোঁজের ঘটনা বিশ্বের বিমান চলাচলের ইতিহাসে অন্যতম বড় রহস্য। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ বিমানটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে যাওয়ার সময় ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য নিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল। উড্ডয়নের মাত্র ঘন্টাখানেক মধ্যেই বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
উদ্ধারকারীরা কয়েক মাস ধরে সমুদ্রের তলদেশ ও দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে তল্লাশি চালালেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফেরে। আজও বিমানটি হদিস মেলেনি।
২. এয়ার ফ্রেন্স ফ্লাইট ৪৪৭
২০০৯ সালে ২৮৮ জন আরোহী নিয়ে ব্রাজিলের রিওডি জেনিরিও থেকে ফ্রান্সের প্যারিসের উদ্দেশে যাওয়ার পথে আটলান্টিকের বুকে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রেন্স ফ্লাইট-৪৪৭। আটলান্টিকের বুক থেকে পরে যাত্রীদের ৫০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অবশেষে ২০১১ সালে বিমানের ব্ল্যাক বক্স রেকর্ডারটির সন্ধান পাওয়া যায়। সঙ্গে ১০৪টি মৃতদেহও। বাকি ৭৪টি মৃতদেহের সন্ধান মেলেনি আজও।
এই দুর্ঘটনায় পুরো আয়ারল্যান্ড শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। কারণ এই দুর্ঘটনায় তিনজন আইরিশ ডাক্তার প্রাণ হারায়। তারা হলেন: কো ডাবলিনের রাথগারের জেন ডিজি, কো টিপ্পেরির রোজক্রিয়ার আইজলিং বাটলার এবং কো ডাউনের বালিগোয়ানের ইথনে ওয়ালস। এই দুর্ঘটনার অনুসন্ধানে ৩১ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় হয়েছিল এবং প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিল।
৩. অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট
১৯৩৭ সালের ২ জুলাই অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট ও বৈমানিক ফ্রেড নুনান নিউ গিনির লে থেকে লকহিড ইলেক্ট্রা টেনই বিমানে করে উড্ডয়ন করেন। লকহিড ইলেক্ট্রা প্রশান্ত মহাসাগরের উপর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং এরপর আর ওই বিমানের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৪. ফ্লাইট ১৯ টর্পেডো বোমারু বিমান
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এক রহস্যপুরীর নাম। কথিত আছে, এর আশপাশ দিয়ে জাহাজ বা বিমান গেলে তা আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বরের বিকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের উপর একটি রুটিন প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে পাঁচটি টর্পেডো বোমারু বিমান পাঠিয়েছিল।
দেড় ঘণ্টা পর বার্তা আসতে থাকে বিমানগুলোর কোন কমান্ডই কাজ করছে না। পাঁচটি সামরিক বিমানে থাকা ১৪ জন ক্রু সদস্য আর কখনও ফিরে আসেনি। তারপর থেকে শুরু হয় বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল লৌকিক উপাখ্যান। উড্ডয়নের কয়েক ঘণ্টা পরে নৌবাহিনী একটি মেরিন ফ্লাইং বোটে অনুসন্ধান ও উদ্ধার মিশনে আরও ১৩ জনকে পাঠায়। তাদেরও আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
৫. ফ্লাইং টাইগার ফ্লাইট ৭৩৯
১৯৬২ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ফ্লাইং টাইগার ফ্লাইট ৭৩৯ গুয়াম থেকে ফিলিপাইন যাওয়ার পথে প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চের উপর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। ৪৮টি বিমান এবং আটটি জাহাজে করে ১,৩০০ মানুষের উদ্ধারকারী দল প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গমাইল জুড়ে নিখোঁজ বিমানের উদ্দেশে অনুসন্ধান চালায়। তবে, শেষ পর্যন্ত নিখোঁজ বিমান বা তার আরোহীদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
৬. উরুগুয়ের বিমান বাহিনী ফ্লাইট ৫৭১
১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর আন্দিজ পর্বতমালা অতিক্রম করার সময় উরুগুয়ে রাগবি দলের সদস্যসহ ৪০ জন যাত্রী এবং পাঁচজন ক্রু সদস্যসহ উরুগুয়ের বিমান বাহিনীর একটি বিমান নিখোঁজ হয়।
৭২ দিন পরে জাহাজের প্রত্যেককে মৃত বলে ধরে নেওয়ার পরে, ১৬ জন জীবিত ফিরে এসেছিল। জন্ম দেয় গা শিউরে ওঠা এক ইতিহাসের। দুর্ঘটনার পরে কীভাবে তারা অনাহারে মৃত যাত্রীদের মাংস খেতে বাধ্য হয়েছিল তাদের সেই ঘটনা অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে অ্যালাইভ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল।
৭. ১৯৪৭ সালে স্টার ডাস্ট ক্র্যাশ
১৯৪৭ সালের ২ আগস্ট বুয়েন্স আয়ার্স থেকে সান্তিয়াগোগামী ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজের বিমান স্টার ডাস্ট নিখোঁজ হয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে, ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে আন্দিজ পর্বতমালায় এই বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। ২০০০ সালে বিমানের যাত্রীদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। সেগুলো হিমবাহের বরফের নিচে সংরক্ষিত ছিল।
৮. ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান বিধ্বস্ত
২০১৬ সালের জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি টুইন ইঞ্জিন টার্বোপ্রপ পরিবহন বিমান ২৯ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমানটি তাম্বারাম বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে পোর্ট ব্লেয়ার যাচ্ছিল।
সাবমেরিন, সারফেস ভেসেল ও বিমান নিয়ে সমুদ্রে নিখোঁজ বিমানের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানটি ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম অনুসন্ধান অভিযান। তবে কোনো চিহ্ন উদ্ধার না হওয়ায়. সেপ্টেম্বরে মিশনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
৯. লেডি বি গুড
লেডি বি গুড নামে একটি মার্কিন সেনা এয়ার কর্পস বি-২৪ডি ১৯৪৩ সালের ৪ এপ্রিল ইতালিতে বোমা হামলার অংশ ছিল। এটি মিশনের একমাত্র বিমান, যেটি লিবিয়ায় তার ঘাঁটিতে ফিরে আসেনি। বিমানটি ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করেছেন কর্মকর্তারা। ব্যাপক তল্লাশি চালানো হলেও বিমান বা ক্রুদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
১৯৫৮ সালে একটি তেল জরিপকারী দল আকাশ থেকে ছবি তুলছিল এবং লিবিয়ার মরুভূমিতে বিমানটি দেখেছিল। বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, তবে শুষ্ক আবহাওয়ায় মোটামুটি অক্ষত অবস্থায় ছিল।
১৯৬০ সালে মরুভূমির বিভিন্ন স্থানে আটজন নাবিকের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। মৃতদেহগুলোর সঙ্গে পাওয়া জিনিসগুলোর মধ্যে কো-পাইলট রবার্ট টোনারের একটি ডায়েরি ছিল। এই ডায়েরির তথ্য থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার আগে ৯জন কীভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে আটজন বেঁচে ফিরেছিলেন।
সবশেষে বেঁচে যাওয়া আটজন মরুভূমির ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। এদের মধ্যে পাঁচজন ৮৫ মাইল হাঁটার পরে মারা যান এবং বাকি তিনজন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত হাঁটতে থাকেন। তবে, বন্দুকধারী ভার্নন এল মুরের দেহাবশেষ শেষ পর্যন্তও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দুর্ঘটনাটি বিমান নিখোঁজের প্রাচীনতম রহস্যগুলোর একটি।
১০. ভ্যাঙ্কুভার ডগলাস ডিসি-৪
১৯৫১ সালে ডগলাস ডিসি-৪ ভ্যাঙ্কুভার থেকে যাত্রা করে এবং আলাস্কার অ্যাঙ্করেজ বিমানবন্দরে থামার কথা ছিল এটির। উড্ডয়নের পরে আবহাওয়া এতটা খারাপ হয়ে যায় যে মাত্র ৫০০ ফুট সামনে পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। রিপোর্ট দিতে দেরি হলে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। তবে নিখোঁজ বিমান বা এর যাত্রীদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post