কবরস্থান থেকে দাফনের ছয় মাস পর আওয়ামী লীগ নেতা আজগর হোসেন চঞ্চল বেপারীর মরদেহ উত্তোলন করা হয় মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার হাট বালিগাঁও থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর শরীফ ফাহাদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উত্তোলন করা হয়।
নিহত আজগর হোসেন চঞ্চল টংগিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী সুমি আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে নিজের কাজ করার জন্য বাড়ির বাহিরে যান চঞ্চল। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চঞ্চল তার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন দিলে তার সঙ্গে কিছু লোকের বাগবিতণ্ডা ও চেঁচামেচি শুনতে পান।
এ সময় আপনার সঙ্গে কে বা কারা আছে জানতে চাইলে চঞ্চল জানান তার সঙ্গে বালিগাওঁ গ্রামের রিটু, হাবিবুর রহমান সোহেল, গহি নিতাই দাস ও উত্তম সরকার সানীসহ আরও কয়েকজন রয়েছে। পরে ওই দিন রাতেই ইসলামপুর রাস্তার পাশে মুমূর্ষু অবস্থায় চঞ্চলকে বালিগাওঁ বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন দেখতে পেয়ে বালিগাঁও ডক্টরস ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বললে চঞ্চলকে ঢাকাস্থ আসগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
ওই সময় এলাকার কতিপয় ব্যক্তি সুমি আক্তারকে বুঝায় যে চঞ্চল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে পোস্ট মর্টেম ছাড়াই চঞ্চলকে কৌশলে মাটি দিতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে সুমি আক্তার জানতে পারেন তার স্বামীর বুকের হাড় ৯টি ভাঙ্গা ছিল এবং পিঠের হাড় ৩ জায়গায় ভাঙা ছিল।
দুষ্কৃতকারীরা চঞ্চল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে বললেও মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনায় যে ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কথা সেই ধরনের আঘাত নেই। পরে চঞ্চলের সঙ্গে থাকা লোকজন তিনি কীভাবে মারা গেছেন- সে বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় চঞ্চলের স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলি আদালতে মামলা করে।
সেখান থেকেও মামলাটি খারিজ করে দিলে মুন্সীগঞ্জ জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার প্রেক্ষিতে টংগিবাড়ী থানাকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে নিতে আদেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সুমী আক্তার বলেন, যখন আমার স্বামী চঞ্চল মারা যান, তখন আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। তার কয়েকদিন আগে আমার তৃতীয় সিজার করা হয়। কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আগে আরও দুই মেয়ে রয়েছে। আমি অসুস্থ থাকায় বুঝতে পারি নাই যে আমার স্বামীকে কেউ মেরে ফেলেছে।
যারা আমার স্বামীরে মারছে তারা দ্রুত কৌশলে তার দাফনের কাজ সেরে ফেলে। পরে জানতে পারলাম ওরা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখেছিল। বালিগাওঁ গ্রামের মোফাজ্জল কমান্ডারের ছেলে রিটু, যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান সোহেল, নিতাই দাস , উত্তম সরকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে পরিকল্পিতভাবে মেরে আমার স্বামীকে রাস্তার নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায় । আমি তাদের আসামি করে মুন্সীগঞ্জ আদালতে মামলা করেছি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টংগিবাড়ী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন বলেন, আদালতের নির্দেশে টংগিবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আদালত নিহতের মরদেহ কবর হতে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। সে মোতাবেক আজ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post