পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারো দেখা গেলো পুরোনো জোটের খেলা। নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন এবং বিলওয়ালর পিপিপি – এই দুই দলের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি দেশের নাগরিকদের মধ্যে তেমন আশ্চর্যের সৃষ্টি করেনি। কারণ, ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই দুই দল আগেই একবার একত্রিত হয়েছিলো।
তার কারণও আছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বসে তার কারিশমা দেখিয়েছেন। ভোটে তারই মনোনীত প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। দেশটির জনগণ যে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আবারও কিং খানকেই চাইছে, এটা বুঝতে সময় লাগেনি নওয়াজ-বিলওয়াল গংদের।
তাই, ইমরান খান যেন কিছুতেই ইসলামাবাদের মসনদে ফিরতে না পারে সেজন্য, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই জোট গঠন করে সরকারে যাওয়ার আলোচনা শুরু করে পিএমএল-এন ও পিপিপি। কিন্তু, হালুয়া-রুটির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কিছুতেই সমঝোতা হচ্ছিলো না নওয়াজ ও বিলওয়ালের মধ্যে।
আগের মেয়াদে পিডিএম জোট নিয়ে বিলওয়ালের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। তাই, পিডিএম টু পয়েন্ট জিরো সংষ্করণের শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন তিনি। নিজেদের চাওয়া সম্পর্কে পরিস্কার ভাষায় শরীফ পরিবারকে জানিয়ে দেন বিলওয়াল। সেই সঙ্গে বলে দেন, নিজেদের দাবি আদায় না হলে জোটে নেই তারা।
মঙ্গলবার সকালেই বিলওয়াল অভিযোহ করেন যে, ছাড় দিতে কেউ রাজি না হলে পাকিস্তানে সরকার গঠনে অচলাবস্থা হতে পারে। তার এমন সতর্ক উচ্চারণের পরই টনক নড়ে শরীফ পরিবারের। এদিন রাতের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছে যায় তারা। আর মধ্যরাতে আসে হালুয়া-রুটি ভাগাভাগি করার ঘোষণা।
এই ভাগাভাগির বিষয়টি পরিষ্কার করেই জানিয়েছে দল দুটো। নওয়াজ শরীফ যেই ফর্মুলায় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি সেটিতে যে রাজি ছিলেন না সেটিও পরিস্কার হয়েছে। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন শাহবাজ শরীফ। আর প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফিরছেন আসিফ আলী জারদারি।
নিজেদের চাওয়া অনুযায়ী, পিপিপি শেহবাজ শরীফের মন্ত্রিসভায় কোনো প্রতিনিধি রাখবে না। তার বদলে প্রেসিডেন্সিসহ শীর্ষ সাংবিধানিক পদগুলো দখলে রাখবে তারা। মন্ত্রিত্বের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কাকে কোন মন্ত্রণালয় দেয়া হবে তার জন্য শেহবাজ শরীফের বিবেচনার ওপরই নির্ভর করবে পিপিপি।
পাঞ্জাবের মন্ত্রিসভায়ও পিপিপি থাকবে না। তবে তাদের ভাগে যা থাকছে সেগুলো হলো- প্রেসিডেন্ট, সিনেট চেয়ারম্যান, পাঞ্জাবের গভর্নর, খাইবার পাখতুনখোয়ার গভর্নর, বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ও জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। এর বিনিময়ে দলটির সমর্থনে কেন্দ্র এবং পাঞ্জাবে সরকার গঠন করবে পিএমএল-এন।
আবার বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদ পেতে পিএমএল-এনের ভোট লাগবে পিপিপি প্রার্থীর। তাই চুক্তি অনুযায়ী পিএমএল-এন পাচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, জাতীয় পরিষদের স্পিকার, সিন্ধুর গভর্নর এবং বালুচিস্তানের গভর্নর পদ।
বিলাওয়ালের বাবা আসিফ আলি জারদারিকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি গো ধরেছিলেন পিপিপি। দলটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জারদারিকে প্রেসিডেন্ট পদ দিতে চাইছিলেন না নওয়াজ শরীফ, কারণ তাতে করে জাতীয় পরিষদে নিরষ্কুশ ক্ষমতা অধিকারী হবেন না তারা।
এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন জারদারি। তার স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর তিনি এই পদে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে পিডিএম জোট করে আগের মেয়াদেও সরকার প্রধান ছিলেন শাহবাজ শরীফ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post