দালাল চক্রের মাধ্যমে সুদূর প্রবাস সৌদি আরব গিয়ে প্রতারণার শিকার হন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান। গত বছরের ১৭ মে সৌদি আরব পৌঁছালে তাকে একটি গোডাউনে বহু মানুষের সঙ্গে রাখা হয়।
দালালরা আগে যে কাজের কথা বলেছিল, তা না দিয়ে তাকে ভবন নির্মাণের ভারী কাজ করতে বলে। সেই কাজ করতে না চাইলে মাহবুবকে ঐ গোডাউন থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ৮ মাসেরও বেশি সময় মাহবুব এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে তিনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মাহবুবের শরীরের কয়েকটি জায়গায় পচন ধরে যায়।
নানা জটিলতা পেরিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরলেও এখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের বেডে কাতরাচ্ছেন। এমন অবস্থায় মাহবুব ও তার পরিবার ঐ দালাল চক্রের বিচার চান।
স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানান, মাহবুবুর রহমান নোয়াখালীর একটি কওমি মাদরাসার শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু ভালো আয়ের স্বপ্ন দেখে বিদেশ যেতে চান। গতবছরের মে মাসে ফেসবুকে সৌদি আরবে ভালো কাজ পাওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে ‘এসএম এন্টারপ্রাইজ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মাহবুব। তাদের মাধ্যমে ‘আরিফ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’ নামক অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন তিনি।
তখন ভিসা প্রসেসিংসহ বিদেশ যেতে অন্যান্য কাজের জন্য ধারদেনা করে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ লাখ ২০ হাজার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয় ঐ প্রতিষ্ঠানকে। দালালরা বলেছিল- সৌদি আরবে মাহবুবকে সুপারশপে কম্পিউটার অপারেটর পদে কাজ দেওয়া হবে। অন্য কোনো ভারী কাজ দেওয়া হলেও তা করতে অসমর্থ্য হওয়ার বিষয়টি তখন জানানো হয় দালাল শহিদুল ইসলাম জীবনকে। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছার পর মাহবুবকে দেওয়া হয় ভবন নির্মাণের কাজ।
তারা জানান, এই ভারী কাজে অক্ষম হয়ে মাহবুব ৮ মাসেরও বেশি সময় ভবঘুরে হয়ে যান। পরে সৌদি আরবের অন্য একটি জায়গায় যাওয়ার পথে গতবছরের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। কিন্তু সেখানে তার চিকিৎসা ও সেবা করার মতো কেউ ছিল না। তার কাছে কোনো টাকা-পয়সাও ছিল না। আবার যে দালাল চক্রকে ফোন করলেও তারা তেমন সাড়া দেয়নি। পরে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে ঠাঁই হয় মাহবুবের। দেড় মাস সেখানে ভোগার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে কোনোমতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মাহবুব। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাহবুবের পেটসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর ক্ষত হয়ে গেছে।
দালালদের সঙ্গে ভুক্তভোগী মাহবুবের স্বজনদের কথাবার্তা ও টাকা লেনদেনের সব প্রমাণাদি ও কাগজপত্র গণমাধ্যমের হাতে রয়েছে।
ভুক্তভোগী মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গত মে মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে পৌঁছানোর পর থাকার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি গোডাউনে। সেখানে গিয়ে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশিকে মানবেতর অবস্থায় দেখতে পান। পরে ভুক্তভোগী মাহবুবকে বলা হয় নির্মাণাধীন ভবনে ভারী কাজ করতে। কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ঐ গোডাউন বের করে দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে ভবঘুরের মতো ঘুরতে থাকেন তিনি। এরপর নিজ এলাকার এক প্রবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন মাহবুব। পরে এক মাস ২২ দিন সৌদি আরবের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন তিনি।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনা জানতে পেরে তার স্বজনরা দালালদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করেন, যেন মাহবুবকে দেশে ফেরানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন ও ব্রাকের মাইগ্রেশন রেসকিউ টিমের সহায়তায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন মাহবুব।
ভুক্তভোগী মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, আমাকে সুপারশপে কম্পিউটার অপারেটর পদে কাজ দেওয়ার কথা বলে সৌদি আরব নিয়ে ভারী কাজ দেওয়া হয়। আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
মাহবুবুর রহমানের বাবা মো. আব্দুল মতিন বলেন, পরিবারের হাল ধরার জন্য ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে আজ অর্ধমৃত হয়ে ফিরে এসেছে। ছেলেকে নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে আমি মসজিদে ইমামতির চাকরিটাও হারিয়েছি। আমি জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ‘আরিফ এয়ার ইন্টারন্যাশনালে’র দালাল শহিদুল ইসলাম জীবনের মুঠোফোন (০১৭০৬১৬২৮২৫) নম্বরে বারবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু কল রিসিভ না করায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post