এবার চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে ওমান এয়ার। আগামী ৮ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছে ওমানের জাতীয় বিমান সংস্থাটি।
এ দিন শেষ ফ্লাইট ছেড়ে যাবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। এরপর চট্টগ্রাম কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এয়ারলাইন্সটির। এ নিয়ে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশি দু’টি বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট তুলে নিল।
এদিকে, ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও হঠাৎ ওমান এয়ারের বন্ধের ঘোষণায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে এ অঞ্চলের যাত্রীদের। পাশাপাশি এর প্রভাবে মধ্যপাচ্য রুটের বিমান ভাড়াও ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, ওমরাহ মৌসুম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে টিকেটেও। বন্ধের ঘোষণাতেই অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোর ওমরাহ টিকেটের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খবর নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম-মাস্কট রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর কার্যক্রম শুরু করে ওমান এয়ার। যার ফলে মধ্যপাচ্যের দেশ ওমানে অবস্থানরত চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবাসীদের যাতায়াত সুবিধাও অনেকটা বৃদ্ধি পায়। শুরুর দিকে সপ্তাহে পাঁচদিন ফ্লাইট পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে প্রতিদিনই ফ্লাইট চালু করে এয়ারলাইন্সটি। যদিও চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করেছিল ওমান এয়ার। সর্বশেষ মহামারী কোভিডের সময় কিছুদিন ফ্লাইট বন্ধ ছিল। বর্তমানে সপ্তাহের রবি, সোম, বুধ এবং শুক্রবার ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। তবে এবারের বন্ধের ঘোষণা অনেকটাই ‘রহস্যময়’ বলে ধারণা সেবা প্রদানকারী এজেন্সিগুলোর।
জানতে চাইলে ওমান এয়ার চট্টগ্রাম স্টেশন প্রধান মো. আসিফ চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৮ মার্চের পর চট্টগ্রাম থেকে ওমান এয়ারের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা থেকে যথারীতি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। চট্টগ্রামে ওমান এয়ারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে, সর্বশেষ ফ্লাইটেও ৯৫ শতাংশ যাত্রী রয়েছে। শুধুমাত্র ‘নেটওয়ার্ক রি-রাউটিং’র কারণে সাময়িক বন্ধ হচ্ছে।’
বাড়বে টিকেটের মূল্য, দুর্ভোগের শঙ্কা :
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হওয়া ওমান এয়ারের বেশিরভাগ যাত্রী জেদ্দা ও মধ্যপ্রাচ্যগামী। এতদিন ওমান এয়ারে করে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ওমানের মাস্কট হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারতেন যাত্রীরা। কিন্তু চাহিদা থাকার পরও ওমান এয়ারের এমন ছন্দপতনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের রুটে ভাড়া বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। পাশাপাশি ওমরাহ যাত্রীদেরও চড়ামূল্যে টিকেট ক্রয় করতে হবে। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগেও পড়তে হবে বলে মনে করছেন সেবা প্রদানকারী এজেন্সিগুলো।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্স অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘ইতোপূর্বে ওমান ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। হয়তো এর প্রভাবের কারণে এখন চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট তুলে নিচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর ওমরা যাত্রী আছে। তাদের দুর্ভোগে পড়তে হবে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের রুটের টিকেট মূল্যও বেড়ে যাবে।’ হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘এখন ওমরার মৌসুম।
এতদিন বাংলাদেশ বিমানসহ পাঁচটি এয়ালাইন্স ওমরাহ যাত্রী পরিবহন করতো। কিন্তু জানুয়ারি থেকে জাজিরা এয়ালাইন্স বন্ধ, এখন ওমান এয়ারলাইন্সও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ওমরা যাত্রীদের এত চাপ কীভাবে সামাল দিবো, তাতে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। অনেকে ঢাকা থেকে টিকেট কাটতে হচ্ছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এয়ারলাইন্সটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।’
জেড. আই. ট্রাভেল্স এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের সিংহভাগ প্রবাসীর অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে। যারা চট্টগ্রাম থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট বন্ধ হতে থাকলে প্রবাসীরা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি চরমদুর্ভোগেও পড়তে হবে। সামনে মধ্যপ্রাচ্যের রুটের টিকেটের মূল্যও অনেক বেড়ে যাবে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post