সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু ও এতিমদের ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ঢাকার উত্তরায় জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করেছে। যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কমপ্লেক্সে মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানা রয়েছে।
শনিবার কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন করেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কমপ্লেক্সটি নির্মাণের পেছনে একটি পারিবারিক গল্পের স্মৃতিচারণ করেন অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
তিনি বলেন, নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেবকে একদিন আমি বলেছিলাম; তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই? জবাবে উনি বলেছিলেন, তুমি মাঝে মাঝে আমাকে বলো, কথা বলতে চাও; কী কথা? বলো? তখন তাকে বলেছিলাম; আমি তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই।
জবাবে তিনি বললেন, আমি মানুষকে এত কিছু দেই, সবার জন্য কাজ করি। আবার তুমি আমাকে কী উপহার দিবা? জবাবে আমি বলেছিলাম; তোমার দেওয়া বাজারের বরাদ্দ থেকে সঞ্চয় করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। পরে ওই টাকা দিয়ে উত্তরখানে একটা জায়গা কিনেছি। জায়গার পরিমাণ সাড়ে ১৪ কাঠা। আমি ওই জায়গা তোমাকে উপহার দিতে চাই।
উনি বললেন, আমার এত জায়গা, এত সম্পদ; তারপরও তুমি কষ্ট করে কেন এসব জায়গা কিনতে গেলে? আমি কিন্তু খুশি হতে পারলাম না। জবাবে বলেছিলাম; আমার পরিবারের সদস্যরা সেখানে জায়গা কিনেছে। ওদের অনুরোধে আমিও কিছু জায়গা কিনেছি। তবুও অনেক দূর হওয়ায় তিনি বললেন, তোমার এ কাজে আমি বেশি খুশি হতে পারলাম না।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, এতদিন পরে এসে সেই জায়গায় নুরুল ইসলাম বাবুলের নামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমদের পড়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আমার অবাক লাগছে; যেখানে জমি কেনার কোনো প্রয়োজন ছিল না, স্বজনদের অনুরোধে কিনেছি। যাকে উপহার দিতে চাইলাম, তিনি খুশি হলেন না। আবার সেখানে তৈরি করলাম তার নামে মসজিদ ও মাদ্রাসা। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার কী কুদরত। তিনি আমাকে দিয়ে এটা করাবেন বলে, এই জমি আমাকে কেনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
আল্লাহ হয়ত চেয়েছেন; তোমার স্ত্রীকে তুমি জীবনে অনেক কিছু দিয়েছো, আর তোমার স্ত্রী শেষ জীবনে তোমাকে এমন কিছু দান করবে, যেটা তোমার অনন্ত জীবনে প্রশান্তির কারণ হবে। এখানে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমদের পড়ার সুযোগ করতে পারব, সেটা আমি ভাবতে করিনি। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমাকে দিয়ে তার (নুরুল ইসলাম) জন্য এটা করিয়েছেন।
তিনি বলেন, গ্রামের ভেতর এই জায়গাটা কেনার ব্যাপারে আমার রাজি হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে অবাক হই। স্বজনদের অনুরোধে জায়গাটি কিনেছি, আবার সেখানে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা তৈরি হবে; সেটা ভাবতেও পারি না।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম আরও বলেন, নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেব মারা যাওয়ার পর আমার মেয়ে মনিকা ইসলাম আমাকে একদিন বলল, তার বাবার নামে একটা মসজিদ মাদ্রাসা করতে হবে। আর এটা করার জন্য ও আমাকে তাড়া দিচ্ছিল। জায়গার ব্যবস্থা করতে বলছিল। পরে ওকে উত্তরখানের এই জায়গাটার কথা বলি। ওই সময়ে এই জায়গায় সেমিপাকা ভবন তৈরি করে দিয়েছিলাম। পরে এখানে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও রমজানে ইফতারের আয়োজন করা হয়। সেই থেকে যাত্রা শুরু।
এতিমদের উদ্দেশে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, তোমরা আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তায় রয়েছে। তোমরা সত্য কথা বলবে, সত্য পথে চলবে। তোমাদের এখানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হবে। নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেব অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রেখে গেছেন; সেখানেও তোমরা চাকরির সুযোগ পাবে। আশা করি, তোমাদের কাজ পেতে অন্য কোথাও যেতে হবে না। বাবুল সাহেবের রেখে যাওয়া অনেক কলকারখানা ও বিভিন্ন অফিস রয়েছে; সেসব জায়গায় তোমরা কাজ করতে পারবে।
এতিমদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, তোমরা নুরুল ইসলাম বাবুলের আত্মার মুক্তির জন্য দোয়া করবে। তোমরা কুরআন পড়বে, ইসলাম শিখবে আর নুরুল ইসলাম বাবুলের জন্য দোয়া করবে। পাশাপাশি আমার মেয়ে মনিকা ইসলাম এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছে। সেও তোমাদের এখানে আসবে, তোমাদের জন্য কাজ করবে। তোমরা আমার ও আমার পরিবারের জন্যও দোয়া করবে। তোমাদের পাশে যমুনা গ্রুপ সবসময় থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post