কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্টারিওর ওয়েন সাউন্ড শহরের দুর্বৃত্তদের বেধড়ক মারধরে এক বাংলাদেশি মারা গেছেন। হাসপাতালে নয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার তার মৃত্যু হয় বলে কানাডার সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
নিহত ৪৪ বছর বয়সী শরীফ রহমানের বাড়ি সিলেট ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন বটেশ্বর এলাকায়। স্ত্রী ও তার সাত বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে তার।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরীফ কানাডায় পাড়ি জমিয়ে ২০১৫ সালে ওয়েন সাউন্ড শহরে ‘দি কারি হাউস’ নামে একটি রেস্তোরাঁ খুলে ব্যবসা শুরু করছিলেন।
কানাডা গ্লোবাল নিউজ জানিয়েছে, গত ১৭ অগাস্ট রাতে নিজের রেস্তোরাঁর পাশেই শরীফকে মারধর করে তিন ব্যক্তি। তারা শরীফের কারি হাউসে খেতে গিয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর রেস্তোরাঁ সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে বিতর্কের জেরে শরীফকে বেধড়ক মারপিট করে তারা পালিয়ে যায়।
পুলিশের বরাতে সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, রেস্তোরাঁয় খাবারের বিল পরিশোধ না করায় তাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন শরীফ ও তার ভাগনে। একপর্যায়ে সেটি সহিংসতায় রূপ নেয়।
খবর পেয়ে রাত সোয়া ৯টার দিকে পুলিশ শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শুক্রবার তিনি মারা যান। ওই ঘটনাকে হত্যা হিসেবে ধরে তদন্ত শুরু করেছে কানাডার পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারী তিনজনকে শনাক্ত করে তাদের ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে দুজনের বয়স ২০-৩০ বছরের মাঝামাঝি, অপরজনের বয়স ৫০-৬০ এর মধ্যে। শরীফকে মারধরের পরই পালিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের।হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শরীফের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ওয়েন সাউন্ড শহরের মেয়র বদ্দি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “শরীফ আমাদের কমিউনিটির একজন ব্যতিক্রমী সদস্য। সিটি ও কাউন্টি কমিটিতে সময় দিতেন তিনি। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও অনুরাগী মানুষ।’
“তার মৃত্যু আমাদের কমিউনিটির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এখন সমবেদনা ও সহানুভূতির সময়। আসুন আমরা সবাই শরীফের উদারতা ও সম্প্রদায়ের প্রতি তার ভালবাসার প্রতিফলন ঘটাই। প্রত্যেকের সঙ্গে একই উদারতার আচরণ প্রদর্শন করি।”
ওই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় অন্য ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। ওয়েন সাউন্ডের ইউরোপা রেস্তোরাঁ মালিক অ্যাকিলিস স্তারভো গ্লোবাল নিউজকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি রেস্তোরাঁ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
“আমরা ব্যবসায়ী। এটি আমার সঙ্গেও ঘটতে পারত। এই ঘটনার খুঁটিনাটি দেখার চেষ্টা করেছি। ২০২৩ সালে কানাডায় এটি হতে পারে না।”
শরীফের ওপর যেখানে আক্রমণ চালানো হয়েছে, রেস্তোরাঁর বাইরে সেই জায়গায় কমিউনিটির লোকজন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এছাড়া শরীফের পরিবারকে সহায়তার জন্য কমিউনিটির লোকজন তহবিলও সংগ্রহ করছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post