ফিলিপাইনের তরুণী নাজিফা রশিদ আমিরা প্রেমের টানে লক্ষ্মীপুরে এসে সুখের সংসার পেয়েছেন। বাঙালিদের মতোই এখন তার চলাফেরা, খাবার ও পোশাক। এমনকি কিছুটা বাংলা ভাষায় কথাও বলছেন তিনি। জেলা সদরের হামছাদী গ্রামের গৃহবধূ নাজিফা স্বামী-সংসারের জন্য ছেড়েছেন পরিবার-পরিজন এবং ধর্ম।
দুইজনের প্রেম চলাকালিন সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এ তরুণী। এখন স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি আর ৩ মাস বয়সী একমাত্র ছেলে সন্তান নিয়েই কাটছে তার সময়।
জানা যায়, দুই দেশের দূরত্ব তিন হাজার ৫১৪ কিলোমিটার। দুজনের ভাষাও ভিন্ন। সংস্কৃতিও আলাদা। তবে এসব কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি দুজনের চার হাত এক হতে। ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি ফিলিপাইনের তরুণী ডিগুসমান লেগুমবাইয়ের (নাজিফা) সঙ্গে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের মালয়েশিয়া প্রবাসী পুত্র মো. নাইমুর রশিদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়েতে ছিল জমকালো আয়োজন। এর আগে মালয়েশিয়ার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির সুবাধে নাইমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় ফিলিপাইনের আরনেসতা লেগুমবাই ও ইমেলদা লেগুমবাই দম্পতির মেয়ে যোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাইয়ের (নাজিফা)। পরিচয় থেকে শুরু হয় তাদের প্রেম। আর সেই প্রেমের টানে বাংলাদেশে নাইমুরের বাড়িতে আসেন আমিরা।
নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন নাজিফা রশিদ আমিরা। এ দম্পতির সংসারে নুর মোহাম্মদ নিহাল নামে ৩ মাস বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। শিশু সন্তানকে লালন-পালনের পাশাপাশি করছেন সংসারের রান্না-বান্নার কাজও। এ দম্পতি বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে ঘিরে গোলাপ ফুলের মাধ্যমে একে-অপরকে জানিয়েছেন নিজেদের ভালবাসার কথাও।
তারা জানান, বিয়ের কিছু দিন পর দুইজনে ফিরে যান ফিলিপাইনে। সেখানে সন্তান জন্ম হওয়ার পর আবারও ফিরেন বাংলাদেশে। তবে, ভিনদেশেই প্রতিষ্ঠিত হতে চান নাইম।
নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে নাজিফা শুরুতে আাসসালামুআলাইকুম বলে সালাম প্রদান করেন। তারপর তিনি ইংরেজীতে ছোট ছোট বাক্যে বলেন, “আমি এখন এই দেশকে ভালবেসে ফেলেছি। স্বামীর পরিবারের সবার সাথেই সংসার জীবন কাটছে মধুর। এদেশেই থাকতে চাই, এদেশের নাগরিক হয়ে।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে এসে তার খুবই ভালো লাগছে। এখানকার মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারছেন। বাংলাদেশের খাবার ও এখানকার সংস্কৃতি তার খুব পছন্দ হয়েছে।
স্বামী মো. নাইমুর রশিদ বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ্। নাজিফাকে নিয়ে বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছে সংসার জীবন। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সে আমাদের সকলের সাথেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত কোন কিছু নিয়েই তার উপর কেউ অসন্তুষ্ট হয়নি। সেও সন্তুষ্ট নতুন এ জীবন নিয়ে।”
তিনি আরও জানান, বিয়ের আগে ৮ বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরমধ্যে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্তে ছুটি নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। নিজের এবং ওই তরুণীর বাবা মায়ের সম্মতিতে তাকে বিয়ে করেছেন।
এসময় এ দম্পতি তাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সবার দোয়া প্রার্থনা করেন। সবার সাথে মিলেমিশে সংসার জীবন কাটাচ্ছেন নাজিফা। নাইম-নাজিফার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে দোয়া চেয়েছেন স্বজনরা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত ২ বছরে ভিনদেশী অন্তত ৮ জন তরুণী লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। তাদের মধ্যে ইতালি থেকে খাদিজা বেগম, নেপাল থেকে জ্যেতি, ইন্দোনেশিয়া থেকে ফানিয়া আইয়প্রেনিয়া, সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সারলেট, ইন্দোনেশিয়া থেকে সিতি রাহাইউ সহ ৮ জন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post