মৃত্যু অনিবার্য এক সত্য। জীবনের শুরুতেই মৃত্যুর ছায়া মাথার উপরে ঘোরে। তাই মৃত্যুর কথা মনে রাখতে হবে। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। মানুষের মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে কী করবে। রসুল সা. কিছু দোয়া শিখিয়েছেন, মৃত্যুশয্যায় এ দোয়াগুলো পড়া।
মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির চেহারা কিবলামুখী করে দেয়া এবং তার সামনে বসে তাকে শুনিয়ে কালিমা পড়তে থাকা। তবে তাকে কালিমা পড়ার হুকুম দিবে না এবং তার পাশে বসে সূরা ইয়াসীন পড়া। কালিমা একবার পড়ে নিলে তারপর যদি দুনিয়াবী কোন কথা না বলে তাহলে দ্বিতীয় বার কালিমার তালকিন না করা। (মুস্তাদরাক১৩০৫, মুসলিম ৯১৬, আবু দাউদ ৩১২১)
নিজের মৃত্যু নিকটবর্তী মনে হলে এই দোয়া পড়তে থাকা اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاَ لْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْاَعْلٰى উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ার হামনি ওয়াল হিকনি বির রফিকিল আলা। (তিরমিজি ৩৪৯৬, আবু দাউদ ৩১২১)
যখন রূহ বের হচ্ছে বলে অনুভব হতে থাকে, তখন এই দোয়া পড়া اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَ سَكَرَاتِ الْمَوْتِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আয়িন্নি আলা গমারাতিল মাওতি ওয়া সাকরাতিল মাওত। (তিরমিজি ৯৭৮)
কোন মুসলমানের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে এই দোয়া পড়া إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللهُمْ أَجْرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفَ لِي خَيْرًا مِنْهَا উচ্চারণ : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরামমিনহা। অর্থ: নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য। এবং আমরা তারই দিকে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এ বিপদে ছাওয়াব দান করুন। এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু বিনিময়ে দান করুন। (মুসলিম ৯১৮)
মৃত ব্যক্তির চক্ষুদ্বয় ও মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দেয়া। প্রয়োজন বোধে মাথার উপর ও থুতনীর নীচ দিয়ে কাপড় বেঁধে দেয়া। চেহারা দেখা, আত্মীয়-স্বজনদের আসা, জানাজায় লোক কম হবে এসব কথা বলে দাফনে বিলম্ব করা নিষেধ। (মুসলিম ৯২০)
মৃত ব্যক্তিকে খাটে রাখার সময় বা মৃত ব্যক্তির লাশবাহী খাট কাঁধে উঠানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ ১২০৬২) যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তিকে গোসল, কাফন ও জানাযার নামায সম্পন্ন করে নিকটস্থ গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা। দাফনের জন্য বিনা অপারগতায় দূরের গোরস্থানে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে নেয়া মাকরূহ। (আবু দাউদ ৩১৮, ৩১৬৫)
মৃত ব্যক্তির লাশ কবরে রাখার সময় এই দোয়া পড়া باسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللَّهِ (আবু দাউদ১০৪৬, মুসনাদে আহমাদ ৪৯৮) কবরে লাশ পুরোপুরি ডান কাতে শোয়ানো অর্থাৎ তার চেহারা ও সীনা কিবলামুখী করে দেয়া। এর জন্য কবরের তলদেশে পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর দক্ষিণে লম্বাভাবে এক হাত পরিমাণ গর্ত করতে হবে অথবা পিঠের পেছনে ও মাথার নীচে মাটির চাকা দিয়ে ডান কাতে শোয়াতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে কবরে চিত করে শুইয়ে শুধু তার চেহারা কিবলামুখী করে দিলেই সুন্নাতের অনুসরণ হবে না। (মুস্তাদরাক ১৯৭)
আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনের জন্য প্রথম দিন খানার ব্যবস্থা করা উচিত। মৃত ব্যক্তির উপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, শুধু তারাই এ খানা খাবে। আগন্তুক মেহমানগণ উক্ত খানায় শরীক হবে না। বরং তারা সান্ত্বনা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবে। মৃত ব্যক্তির লোকদের উপর বোঝা সৃষ্টি করবে না। (বুখারি ৫৪১৭, মুসনাদে আহমাদ ৯০৫)
কবর খুব বেশি উঁচু না করা এবং পাকা না করা। (মুসলিম ৯৬৯, ৯৭০)। কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৬৪৮১) মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তার মাগফিরাত কামনায় দু’আ করতেন এবং অন্যদেরকেও মাগফিরাতের দু’আ করতে বলতেন। বিশেষত মুনকার নাকীর ফিরিশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সে যেন দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে, সে জন্য দোয়া করতে বলতেন। (আবু দাউদ ৩২২১)
কবরের মাথার দিকে এক ব্যক্তি সুরা বাকারার শুরু থেকে مُفۡلِحُوۡنَ পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে অপর ব্যক্তি آمَنَ الرَّسُولُ থেকে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে। কবরের চার কোণায় খুঁটি গাড়া এবং চার কোণায় চার কুল পড়ার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। (শুআবুল ঈমান ৮৮৫৪)
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post