পর্যটকদের কাছে খুব একটা পরিচিত না হলেও ঐতিহাসিক মহেড়া জমিদার বাড়ি, ১০ টাকার নোটে স্থান পাওয়া আতিয়া মসজিদ, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট গোপালপুর মসজিদ, গজারির বন, আর রাবার বাগানের জন্য টাঙ্গাইল জেলার বেশ খ্যাতি আছে দেশ-বিদেশে। প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকলে এগুলোও হতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান; মেটাতে পারে তাদের মনের খোরাক।
চাইলে একদিনেই ঘুরে আসা যায় এ পাঁচটি দর্শনীয় স্থান। আর দুদিন সময় হাতে থাকলে তো কথাই নেই! ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে এ জেলায় যেতে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা। মহাখালী থেকে প্রতিদিন শতশত বাস টাঙ্গাইল জেলা শহর এবং উপজেলা শহরে চলাচল করে। যে কোনও বাসে উঠলে দুঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে দেবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মহেড়ায়। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ২০ মিনিটে যাওয়া যাবে সেখানকার ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ বাড়িটি বর্তমানে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অধীনে। সিনেমা এবং নাটক নির্মাতারা সেট হিসেবে প্রায়ই বেছে নেনে এটি। এছাড়াও প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু নারী ও পুরুষ ভিড় করেন এখানে। তবে এ জমিদার বাড়িতে ঢুকতে চাইলে অবশ্যই টিকিট কাটতে হবে। জনপ্রতি ৫০ টাকা টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকলেই দেখা যাবে জমিদারদের ব্যবহার করা নানা জিনিস, জানা যাবে তাদের সব ইতিহাস। শিশুদের জন্য রয়েছে হরিণের খামার, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রকমের রাইডস। খাবারের জন্য রয়েছে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের ক্যান্টিন। সেখানে প্রায় সব রকম খাবারেরই সুবিধা রয়েছে।
মহেড়া জমিদার বাড়িতে আনন্দ উপভোগ করে টাঙ্গাইল শহরে যেতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মহাসড়কে যেতে হবে। সেখানে গেলেই পাওয়া যাবে বাস। মহাসড়ক ধরে ২০ কিলোমিটার গেলেই শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড। এখান থেকে যাওয়া যাবে শহরের মিষ্টি পট্টি বা পাঁচআনি বাজার। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের অর্ধশত দোকান রয়েছে এ বাজারে। টাঙ্গাইল আসবেন আর পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ নেবেন না তাই কী হয়?
চমচমের স্বাদ নিয়ে চলে যেতে পারেন টাঙ্গাইল শাড়ির স্বর্গরাজ্য পাথরাইলে। টাঙ্গাইল শাড়ি কীভাবে তৈরি হয়, সেই প্রক্রিয়া দেখে মন চাইলে কেনা যাবে ৫০০ থেকে হাজার টাকা মূল্যে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি।
তাঁতপল্লী থেকে ১৫ মিনিটেই যাওয়া যাবে ৪০০ বছরের পুরানো আতিয়া মসজিদ দেখতে। মুঘল ও সুলতানি আমলের অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর এ মসজিদের নকশা একসময় ১০ টাকার নোটে দেখা যেতো। এখানকার ইতিহাস আর মসজিদের নান্দনিক কারুকাজ উপভোগ শেষে ২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখতে অটোরিকশায় যেতে হবে জেলা শহরে।
এখানে নতুন বাস স্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক গিয়ে বিনিময় পরিবহনের বাসে যেতে হবে গোপালপুর উপজেলায়; সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মতো। সেখান থেকে সিএনজি অথবা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে গ্রামের ভিতর দিয়ে ২০ কিলোমিটার গেলেই গোপালপুরের ঝাউয়াইল গ্রাম। এ গ্রামেই স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ২০১ গম্বুজ মসজিদ।
এ মসজিদের নান্দনিক কারুকাজ দেখে আকৃষ্ট হবে যে কেউ। সুসজ্জিত ২০১টি গম্বুজের এ মসজিদে রয়েছে ৮টি সুউচ্চ মিনার, যার মধ্যে ৪টি ১০১ ফুট এবং বাকি ৪টি ৮১ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন এ মসজিদ দেখতে শতশত ভ্রমণপিপাসু এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে ভিড় করেন। এখানকার স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে মসজিদের ছাদে উঠে ছবি তুলতে পারেন। ঐতিহাসিক এ মসজিদকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে এখানে তৈরি করা হয়েছে হোটেলসহ নানা স্থাপনা।
এরপর নিরিবিলি কোনও এক বিকেলে গভীর বনে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি জাগাতে পারে মধুপুর জাতীয় উদ্যান। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর বানরের বাঁদরামিতে মিলবে বেশ আনন্দ। ২০ হাজার একরেরও বেশি এলাকাজুড়ে রয়েছে মধুপুর জাতীয় উদ্যান। শহরের কোলাহল থেকে দূরে প্রশান্তির খোঁজ পেতে মধুপুর জাতীয় উদ্যানকে সেরা জায়গা মনে হয় প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে।
সেখানে যেতে গোপালপুর ২০১ গম্বুজ মসজিদ থেকে আবার ফিরে যেতে হবে অটোরিকশা অথবা ভ্যানে করে উপজেলা শহর হয়ে পেড়াবাড়ি নামক স্থানে। সেখানে গিয়ে মধুপুরের বাস পেয়ে যাবেন। বাসে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। মধুপুর থেকে আবারও অটোরিকশা নিয়ে ২০ মিনিট গেলেই মধুপুর জাতীয় উদ্যান নেমে হারিয়ে যাওয়া যাবে গভীর বনে। বনের ভিতর দিয়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া সম্ভব।
এরপর পেয়ে যাবেন অসংখ্য বানর ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। হরিণ প্রজনন কেন্দ্র থেকে কিছুদূর গেলেই দোখলা রেস্ট হাউস। সম্প্রতি দোখলাতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আধুনিক রিসোর্ট নির্মাণ করেছে বন কর্তৃপক্ষ। সেখানে আয়েস করে রাত্রিযাপন করা যাবে। এসি রুম ছাড়াও টিপটপ এ তিনতালা ভবনে যাওয়া যাবে প্রায় সব রকম সুবিধা।
মধুপুরে আসলে আনারসের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। এখানকার আনারসের জাত যেমন দেশসেরা, তেমনি দামেও সস্তা। স্থানীয়দের বাসায় গেলে কাঁচামরিচ দিয়ে আনারস ভর্তা খাওয়াবে। দারুণ স্বাদ পাবেন।
দোখলায় রাত্রী যাপন শেষে ঘুরে দেখতে পারেন পীরগাছা রাবার বাগান। জায়গাটি জামালপুর আর টাঙ্গাইল জেলার শেষ সীমানায়। দুর্গম এলাকা হলেও ব্যাটারিচালিত ভ্যানে যাওয়া যাবে। গ্রামের পথ ধরে অন্যতম মনোরম স্থান পীরগাছা রাবার বাগান।
এখানকার বাগানে সারিবদ্ধভাবে বেড়ে উঠা বড় বড় গাছ বছরে দুই ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষাকালে গাছগুলোতে দেখা যায় সবুজের সমারোহ আর শীতকালে তারা সেজে উঠে পাতাঝরা সৌন্দর্যে। ফলে প্রত্যেক সময়ই বাগানে মাধুর্য বিরাজ করে। বাগানের ভিতরেই রাবার কারখানা রয়েছে। প্রতিদিন লেবাররা কাঁচা রাবার সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং শিট প্রস্তুতকরণের পুরো প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ মিলবে।
হাতে সময় থাকলে ধনবাড়ি নওবাব প্যালেজ ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়াও নাগরপুর জমিদার বাড়ি, করটিয়া জমিদার বাড়ি, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি গিয়ে প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে পারেবেন।
টাঙ্গাইল শহরে এলেঙ্গা রিসোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে রাত্রী যাপনের সুযোগ মিলবে। তবে দর্শনীয় স্থানগুলোর কাছে থাকার সুব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের কাছে এখনও আকষর্ণীয় হয়ে উঠতে পারেনি টাঙ্গাইল জেলা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post