একটি বনসাই গাছের চারার মূল্য প্রায় চার লাখ টাকা। একটি জয়তুন গাছ বিক্রি হয় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকায়। একটি ইনডোর লেমন চারা গাছের দাম ধরা হচ্ছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা।
দুবাইয়ের বিখ্যাত আল ওয়ার্সান নার্সারিতে দেখা যায়, উচ্চতা ও পরিমাপের উপর নির্ভর করে চারার দাম ধরা হচ্ছে সেখানে। ফুট হিসেবে বিক্রি হচ্ছে, মূল্যবান ওয়াশিংটোনিয়া ও বাওবাব গাছের চারা। কোনো কোনো চারার এক ফুটের দামই আসছে বাংলাদেশি মূল্যে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কোনো পর্যটক এই নার্সারিতে প্রথম এলে দাম শুনে অবাক হবেন। কিন্তু দেশটিতে যারা নিয়মিত চারাগাছ কেনাবেচা করেন তাদের কাছে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুবাইয়ে আল ওয়ার্সান এলাকার বিশাল জায়গা দখল করে আছে এই নার্সারি। যেখানে প্রায় ৫০টি আলাদা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃক্ষপ্রেমীদের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে মূল্যবান হাজারো প্রজাতির চারাগাছ।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে চারা আমদানি করেন এখানকার বিক্রেতারা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ফুল, ফল, ঔষধিসহ প্রায় তিন হাজার প্রজাতির গাছের চারা বেচাকেনা হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরম কমলে কিংবা শীতের শুরুতে নার্সারির বেচাবিক্রি বেড়ে যায়। ভিনদেশিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানে ব্যবসা করেন বাংলাদেশিরাও। তাদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার আতিকুর রহমান শিশু। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি দেশটিতে নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দুবাইয়ের আল ওয়ার্সান নার্সারিতে রয়েছে তার একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
এই ব্যবসায়ী জানান, দুবাই ছাড়াও আমিরাতের ফুজাইরাহ দিব্বা এলাকায় আছে তার আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এসব নার্সারিতে কাজ করেন প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক। বছর শেষে তার আয় হয় প্রায় ৪০ লাখ দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি টাকা।
শুধু ব্যবসা নয়, বিখ্যাত এই নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বহু প্রবাসী। এখানকার নার্সারিতে বেতনভুক্ত শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কয়েক হাজার প্রবাসী।
১১ বছর ধরে একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আরিফ সরকার বাবু। দীর্ঘদিন নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় দেশি-বিদেশি হরেক রকম গাছের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন এই নার্সারিগুলো বৃক্ষপ্রেমীদের স্বাগত জানায়। অনেকে দেখতে এসেও কিনে নিয়ে যান পছন্দের চারাগাছ। ইনডোর ও আউটডোরে লাগানোর উপযোগী গাছের চারায় ভরপুর এই নার্সারিগুলো। গরমের মৌসুমে বিক্রি বাড়ে ইনডোর চারার আর শীতকালে আউটডোরে রোপন উপযোগী চারার চাহিদা বেড়ে যায়।
আরেক বাংলাদেশি আল আমিন প্রায় দুই বছর ধরে কাজ করছেন এখানে। মাসে বেতন পান এক হাজার ২০০ দিরহাম। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। তার মতো অনেকেই এখানে বেতনভুক্ত শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আল আমিন জানান, নতুন শ্রমিকরা ৯০০ থেকে এক হাজার আর পুরোনো শ্রমিকের ক্ষেত্রে বেতন ধরা হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ দিরহাম। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের খাওয়া ও থাকার বন্দোবস্ত করে।
গত পাঁচ বছরে এমন অনেক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে এই নার্সারি ঘিরে। দিনে দিনে বাড়ছে আরও বাংলাদেশির নার্সারির সংখ্যা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চারা গাছের পাশাপাশি বাগান কিংবা বাসা-বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের উপযোগী হরেক রকম পণ্যও বিক্রি হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post