গাজায় হামলা চালানোর পর থেকে হাজার হাজার ইসরায়েলি সেনা ভয়াবহ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার ইসরায়েলি সেনাকে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
সোমবার এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর গাজায় হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত ও রিজার্ভ বাহিনীর ১৩ হাজার সদস্যের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস ও মিডল ইস্ট মনিটরের
সেখানে বলা হয়েছে, ২৩৩৫ জন সেনাকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এছাড়া ১৫৫ জন সেনা চোখের গুরুতর আঘাতের জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ২৯৮ জনের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তথ্যে আরও দেখা গেছে যে, গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে প্রায় ৯ হাজার ইসরায়েলি সেনা মানসিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের প্রায় এক চতুর্থাংশ আর যুদ্ধে ফিরে আসেননি।
এই তথ্যের মাধ্যমে ধারণা করা যায় যে, অন্তত ২৭৫ জন ইসরায়েলি সেনা মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুতর স্তরে পৌঁছেছে এবং তাদেরকে অভ্যন্তরীণ মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তেল আবিবে তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন। ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য, উত্তর গাজায় ইসরায়েলের অভিযান সমাপ্তির পথে। সেখান থেকে সেনাদের ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্লিংকেন বলেছেন, উত্তর গাজায় যাতে গৃহহীন মানুষ ফিরে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং সে কারণেই দ্রুত সেখানে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের যাওয়া দরকার। তারা গিয়ে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে পারবে। তাদের দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহহীনদের ফের উত্তর গাজায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযান ধীরে ধীরে কমাতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে স্থানীয় মানুষের মানবিক সাহায্যের দিকে।
এদিকে পশ্চিম তীর ঘুরে মিশরে পৌঁছেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। রাফাহ সীমান্ত ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী দাবি করেছেন, মিশর এবং গাজার সীমান্ত রাফাহ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত সেখান দিয়ে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা দরকার। তার কথায়, গাজার পরিস্থিতি ‘নরকে’র মতো। সেখানে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সবচেয়ে জরুরি।
রাফাহ সীমান্ত যাতে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, তার জন্য জার্মানি সবরকম চেষ্টা চালাবে বলে এদিন আশ্বাস দিয়েছেন বেয়ারবক। সীমান্তে প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার ট্রাকের লাইন পড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কারণ, প্রতিটি ট্রাক খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছে ইসরায়েলের সেনা। ট্রাকের ওই লাইন চোখে দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাফাহ সীমান্তে তার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ।
মার্কিন মন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের মতোই বেয়ারবকও গাজায় আরও বেশি মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, জার্মানি সবসময় ইসরায়েলের পাশে আছে এবং থাকবে। ঐতিহাসিক কারণেই থাকবে।
মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) একটি বৈঠক করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় লাফিয়ে বাড়ছে অঙ্গহানির ঘটনা। বোমা-গুলিতে আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে এলে অনেকেরই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হচ্ছে। ভালোভাবে চিকিৎসা দেওয়া গেলে অনেকেরই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হতো না বলে মনে করছে ডাব্লিউএইচও।
গাজার হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ। বেশ কিছু হাসপাতাল অভিযানের ফলে ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ হাসপাতাল চত্বরে আশ্রয় নিয়েছে। ষথেষ্ট ওষুধ নেই। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী কম। এই পরিস্থিতিতে অঙ্গহানি আটকানোর জন্য যে ধরনের অপারেশন করা প্রয়োজন, চিকিৎসকেরা তা করতে পারছেন না। বহু ক্ষেত্রে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারছেন না রোগীরা। ফলে অঙ্গহানির ঘটনা ঘটছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৩,৩৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৯,৪১০ জন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৪৩ জন আহত হয়েছে। এখনও ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে তাদের সংখ্যা এখনও মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে গণনা করা হয়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে রয়টার্স মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত একদিনে গাজায় অভিযানে ৯ সেনার মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গাজায় স্থল অভিযানে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৮৭ ইসরায়েলি সেনা। আর ৭ অক্টোবর থেকে মোট ৫২০ ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post