মানিকগঞ্জ–২ আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আসনের পরাজিত প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, কালো টাকা বিলিয়ে ভোট কেনা হয়েছে, প্রবাসী ও মৃতদের নামে ভোট দিয়ে তাঁকে হারানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে সিঙ্গাইর উপজেলার পূর্ব ভাকুম এলাকায় নিজ বাড়িতে নির্বাচনী এলাকার (সিঙ্গাইর–হরিরামপুর) দলীয় কর্মীদের আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেন মমতাজ বেগম।
তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের রাত থেকে বিজয়ী প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর সমর্থকেরা তাঁর বহু কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে। নির্বাচনে কাজ করা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, নারীদের মারধর করাসহ নানা ভাবে হুমকি–ধামকি দিচ্ছে।
সভায় মমতাজ বেগম তাঁর মোবাইল ফোনে রাখা আহত এক কর্মীর ছবি উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলেন, ‘আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগের ছেলেদের বাড়ি থেকে বের হলে বিজয়ী প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকেরা তাদের ধাওয়া করছে।’
নির্বাচনে পরাজয় সম্পর্কে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু কালো টাকা দিয়ে তারা (প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী) তিনটি ইউনিয়নে (বলধারা, বায়রা ও পৌরসভার একাংশ) বসবাস করা বিএনপির ভোট কিনে নিয়েছে। ওইসব ইউনিয়নে যেসব ভোটার বিদেশ থাকে এবং মারা গেছে, তাদের ভোট তারা নিজেরা অস্বাভাবিক ভাবে দিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমি পাস করার পরেও তিনটি ইউনিয়নে অস্বাভাবিক ভোটের কাছে আমাকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।’
নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কমিশনে আপিল করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
নির্বাচনের পর কতজন কর্মী আহত হয়েছে জানতে চাইলে মমতাজ বলেন, ‘সিঙ্গাইর উপজেলার সিঙ্গাইর পৌরসভায়, চান্দইর, জার্মিতা, জয়মণ্ডপ, তালেবপুর, জামশা ইউনিয়ন এবং হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বয়রা, বলড়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক কর্মী বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছে। এ সবকিছুর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’
কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হামলার পর আমি স্ব-স্ব থানার ওসি এবং এসপিকে জানিয়েছি। থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি, বা কোনো অ্যাকশন নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার আমি ডিএমপি কমিশনারকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।’
নৌকার পক্ষে সশরীরে মাঠে না থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মমতাজ বেগম বলেন, ‘তার বিষয়টি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবগত আছেন। সেই ব্যাপারে ওনারাই ব্যবস্থা নিবেন।’
তিনি বলেন, ‘কেন তিনি (গোলাম মহীউদ্দিন) নৌকার পক্ষে নামেননি, তিনি তো মানিকগঞ্জ–১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেলের লাঙ্গলের পক্ষে নামছেন, লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেছেন অথচ একাধিকবার বলার পরেও তিনি আমার নৌকার পক্ষে একদিনের জন্য নামেননি, এটা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অবগত আছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন, তিনি ব্যবস্থা নিবেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে গোলাম মহীউদ্দিন বিক্রি হয়েছেন বলে মনে করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মমতাজ বেগম বলেন, ‘এটা আমার মনে করার কিছু নেই। এটা এখন সাধারণ জনগণের কাছে রটে গেছে। এটা এখন সবাই জানে। মোটা অঙ্কের কালো টাকা দিয়ে এ রকম বড় বড় রাঘববোয়াল বশ করে ফেলছে।’
পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী–সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ–২ আসনের বিজয়ী প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু সাংবাদিকদের সেলফোনে বলেন, ‘নির্বাচনের পর মমতাজ বেগমের কোনো কর্মীর ওপর আমরা কর্মীরা হামলা বা মারধর করেনি। উল্টো তার কর্মী–সমর্থকেরা আমার কর্মীদের ওপর নানা ভাবে অত্যাচার, নির্যাতন করছে।’
সিঙ্গাইর–হরিরামপুর এবং সদরের একাংশ নিয়ে মানিকগঞ্জ–২ আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪৬ জন। এ আসনে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ৬ হাজার ১৭১ ভোটের ব্যবধানে মমতাজ বেগমকে পরাজিত করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post