সুরা আর রাহমান কোরআনের প্রসিদ্ধ একটি সুরা। এই সুরায় ‘ফাবি আইয়ি আলা ইরাব্বিকু মা তুকাজ্জিবান’ আয়াতটির পুনরাবৃত্তি রয়েছে। এর অর্থ, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে।’
এখানে ‘তোমরা’ বলতে জিন ও মানবজাতিকে বোঝানো হয়েছে। সুরা আর রহমান খুব সহজে মুখস্থ করা যায়। এর বিষয়গুলোর ক্রমবিন্যাসের ধারাটি দেখা যাক।
সুরা আর রাহমান কোরআনের ৫৫ তম সুরা, এর আয়াতসংখ্যা ৭৮।
সুরা আর-রহমানে ৫টি বিষয়বস্তু রয়েছে:
১. কোরআন।
২. আল্লাহর সৃষ্টি দুনিয়ার উপহার।
৩. বিচারদিবস ও জাহান্নাম।
৪. প্রথম জান্নাত।
৫. দ্বিতীয় জান্নাত।
এই সুরার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে জিন ও মানবজাতি উভয়কে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সুরায় সবকিছু যুগ্মভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন মানুষ এক প্রজাতির যুগল। জান্নাতের বর্ণনা যুগ্মভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাগানের কথাও দুইবার বলা হয়েছে।
কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার পরেও অস্বীকার করে; যারা তাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখে না, তাদের অসংখ্য নেয়ামত দেওয়ার পরে ও তারা কৃতজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে না। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেছেন ‘তোমরা আর কত অকৃতজ্ঞ হবে?’ আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা আর কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’
প্রথমটি হলো কোরআন। আল্লাহ কোরআনকে শিক্ষাদানের জন্য উপহার দিয়েছেন। আর রহমান, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন—এটাই হলো এর প্রথম সারকথা। যারা এই কিতাবের বিস্ময়কে অস্বীকার করে, তারা কোনো কিছুর বিস্ময়কেই স্বীকার করে না। তারা তাদের চারপাশের প্রশংসা করে না। অথচ আমাদের ঘিরে আছে আল্লাহ্র সৃষ্টি করা চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র এবং গাছপালায় সজ্জিত অনুপম পৃথিবী।
তৃতীয় বিষয় মূলত বিচার দিবস। সেদিন তিনি মানুষ ও জিনকে একত্র করবেন। ‘সানাফরুগু লাকুম আইয়্যু হাছ্ছাক্বলান’। বিশাল জমায়েত ও দুটি বিপুল গোষ্ঠীকে তিনি একত্রে উপস্থিত করবেন। বিচার দিবস শুরু হয়ে গেছে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে পড়ছে, পৃথিবী বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে—এসব মহাপ্রলয়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
অপরাধীরা তখন ছুটে পালাচ্ছে। অপরাধীদের জিজ্ঞেসও করতে হচ্ছে না। চেহারা ও অবস্থা দেখেই তাদের চেনা যাচ্ছে। তারপর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। অপরাধীদের হিঁচড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটি এ সুরার নিষ্করুণ চিত্র।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে সুরা আল্লাহর নাম ‘আর রাহমান’ দিয়ে শুরু করলেন—যিনি পরম ক্ষমাপরায়ণ, যত্নশীল ও দয়ালু—সে সুরার মাঝখানে তিনি জাহান্নামের এতটা ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরলেন কেন? আসলে এটি আল্লাহর করুণা প্রদর্শণের একটি পথরেখা। কারণ জাহান্নাম আছে। তাই আগে থেকেই জাহান্নাম সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন, যাতে আমরা এর থেকে আল্লাহ্র দয়া পেতে পারি। এই দয়াই তো আল্লাহর দেওয়া উপহার। আগে জানা থাকলে নিজেকে আমরা এর থেকে রক্ষা করতে পারি।
জাহান্নামের পরে জান্নাতের বর্ণনার শুরু। ‘আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।’ প্রথমে আল্লাহ ভয় দেখিয়েছেন। তারপর বলছেন, সেই ভয় যদি আমাদের চিত্তকে সরল পথে চালিত করতে পারে, তাহলে আছে জান্নাত।
এই সুরার জান্নাতের বর্ণনা দুটি অংশে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম অংশে আছে কোরআন নাজিলের মহিমা বর্ণনা; দ্বিতীয় অংশে আল্লাহর দেওয়া দুনিয়ার উপহারের সৌন্দর্য বর্ণনা।
যারা আল্লাহর বর্ণনা করা এসব বিষয়কে অস্বীকার করে তাদের পরিণাম বিচার দিবসের পর জাহান্নামের আগুন। আর যারা তাঁর সতর্কবাণী শুনে ভয় পায় তাদের জন্য রয়েছে দুটি বাগান। এর পর বাগানের বর্ণনার শুরু। সে বাগানে আছে চমৎকার সব ফলফলাদি, আনতনয়না তরুণী, আর উচ্ছল ঝরনাধারা।
তারপর বলা হয়েছে সেখানে থাকবে পবিত্র ও মনোরমা নারী। তাঁবুর জেনানায় থাকবে হুর, যাদেরকে কেউ কখনো স্পর্শ করেনি। ওরা বসবে সুন্দর গালিচা বিছানো সবুজ চাদরে হেলান দিয়ে। এটি দ্বিতীয় জান্নাতের বর্ণনা।
দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই সুরায় বান্দাদের আল্লাহর প্রতি ইমান আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post