প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের রফতামুখী তৈরি পোশাক খাত। শ্রমিক নিজেই করতে পারছেন তার কাজের মূল্যায়ন। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে কারখানার উৎপাদনশীলতা, তেমনি শ্রমিকরাও পাচ্ছেন বোনাস-প্রণোদনা। একই সঙ্গে হিসাব কষার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের এগিয়ে রাখতে উদ্যোক্তারা উৎপাদনে যুক্ত করে চলেছেন স্বয়ংক্রিয় নানান আধুনিক ব্যবস্থা। এমনই এক সংযুক্তি স্ট্যান্ডার্ড মিনিট ভ্যালু প্রযুক্তি।
শ্রমিকরা কাজ শুরুর আগে নিজের আইডি কার্ড পাঞ্চ করে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে যুক্ত হয়ে যান। ওই শ্রমিক নির্দিষ্ট পোশাকের কোন অংশের কাজ এক ঘণ্টায় কী পরিমাণ করবেন তা আগে থেকেই ইনপুট দেয়া থাকে। কোনো কারণে কাজ বন্ধ থাকলে তা-ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারেন কর্তৃপক্ষ। এমনকি কোন মেশিনে বসে ভুল কাজ ঠিক করছেন কোন শ্রমিক, জানা যাচ্ছে সেই তথ্য-ও।
এ বিষয়ে ফতুল্লা অ্যাপারেলসের সহকারি ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা বলেন, আগে প্রত্যেক অপারেটরের সঙ্গে আমার নিজের কথা বলতে হতো বা তাদের সচেতন করতে হতো। এখন এই সফটওয়্যার লাগানোর পর অপারেটররা নিজেই তাদেরকে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে উৎসাহিত হচ্ছেন।
এখন আর কেউ চাইলেই মনগড়া হিসাব দিয়ে কোনো শ্রমিককে বঞ্চিত করতে পারবে না বলেও জানালেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে ফতুল্লা অ্যাপারেলসের মহাব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, উৎপাদনশীলতা আগের তুলনায় বেড়েছে। যারা ভালো কাজ করেন, তাদের পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে কাউকে অতিরিক্ত বেতন হিসেবে মাসে ১ থেকে ২ হাজার টাকা বাড়তি দেয়া হয়।
নিজেরাই নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে পারা শ্রমিকরাও খুশি, কারণ কাজের অগ্রগতি বুঝে নানা ধাপে তারা আর্থিক প্রণোদনা পান। শ্রমিকরা জানান, সারা দিন যা কাজ করব, তা এই মেশিনে রেকর্ড থেকে যায়। আগে অনেকে কাজ বেশি করত। আবার অনেকে কম কাজ করত। কিন্তু কে কত সময় কাজ করছে, তা তো মালিকপক্ষ বুঝতে পারতেন না। কিন্তু এই মেশিন লাগানোর পর তারা মূল্যায়ন করতে পারছেন কে কত সময়ে কতটুকু কাজ করছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শ্রমিকদের সঠিক মূল্যায়ন করেই বাজার ধরতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। সিরডাপের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, তৈরি পোশাক খাতে যদি এই ধরনের সৃজনশীল মনিটরিং হয়, তাহলে এতে উৎপাদন খরচ কমবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা যে কী পরিমাণ বদলে গেছে তা আসলে বাইরে থেকে খুব একটা বোঝা সম্ভব নয়। আগে যেখানে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজের মূল্যায়ন করতেন লাইন সুপারভাইজার, ম্যানেজারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা; সেখানে এখন নিজেদের কাজের মূল্যায়ন তারা নিজেরাই করছেন।
নিবেদিতপ্রাণ এই শ্রমিকদের সুঁই-সুতায় বছরের পর বছর ধরে তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে লেখা হয়েছে গর্বের ট্যাগ লাইন- ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post