২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্বের ঝড় বয়ে গেছে। গত বছর দেশটিতে দেউলিয়াত্বের আবেদন ১৮ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ। মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৬টি আবেদন পড়েছে বিদায়ী বছরে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত দেউলিয়াত্বের তুলনায় চ্যাপটার-১১-এর অধীন বাণিজ্যিক দেউলিয়াত্বের আবেদন বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। বাণিজ্যিক দেউলিয়াত্বের আবেদন যেখানে ৭২ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে ব্যক্তিগত দেউলিয়াত্বের আবেদন বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এপিক এএসিইআর নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে।
যেসব কারণে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্বের আবেদন বেড়েছে, সেগুলো হলো উচ্চ নীতি সুদহার, ঋণ দেওয়ার নীতিমালা কঠোরতর হওয়া আর মহামারির সময়ের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি শেষ হওয়া।
২০২২ ও ২০২৩ সালজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ঋণ করার ব্যয় বেড়েছে। এতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছে। পরিণামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের পক্ষে নতুন ঋণ নেওয়া কঠিন হয়েছে।
এ ছাড়া করোনা মহামারির সময় মার্কিন সরকার যেসব আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল, সেগুলো একের পর এক শেষ হয়েছে। ব্যক্তি ভোক্তা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান—উভয়ের সুরক্ষাই কমে গেছে।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে অবশ্য দেউলিয়াত্বের আবেদন আগের মাস নভেম্বরের সাপেক্ষে কিছুটা কমেছে। ডিসেম্বর মাসে মোট ৩৪ হাজার ৪৪৭টি দেউলিয়াত্বের আবেদন জমা পড়েছে, আগের মাস নভেম্বরে যা ছিল ৩৭ হাজার ৮৬০টি। তারপরও ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেউলিয়াত্বের আবেদন বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্বের আবেদন বাড়লেও ২০১৯ সালের তুলনায় তা অনেক কম। সে বছর মোট ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৮১৬টি দেউলিয়াত্বের আবেদন জমা পড়েছিল।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালেও দেউলিয়াত্বের আবেদন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এপিক এএসিইআরের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল হান্টার রয়টার্সকে বলেন, ‘২০২৩ সালে দেউলিয়াত্বের আবেদন বৃদ্ধির বিষয়টি অপ্রত্যাশিত নয়। মহামারির সময় দেওয়া প্রণোদনা শেষ হয়ে যাওয়া, উচ্চ সুদহার, ঋণ পরিশোধ কমে যাওয়া ও গৃহঋণ ঐতিহাসিক উচ্চতায় উঠে যাওয়ায় ২০২৪ সালেও দেউলিয়াত্বের আবেদন বাড়বে বলেই ধারণা করি।’
মূলত গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহঋণ রেকর্ড ১৭ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১৭ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারে উঠেছে। ফেডারেল রিজার্ভ এ তথ্য দিয়েছে। ঋণ পরিশোধের হারও কমেছে। যদিও তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মহামারির আগের বছরে ঋণ পরিশোধ না করার হার ২০২৩ সালের তুলনায় বেশি ছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ সম্প্রতি ৩৪ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ঋণসীমা ও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নিয়ে দেশটি আবারও সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলো চাপে পড়েছে; যদিও নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার অনেকটাই কমেছে।নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বন্ধকি ঋণের সুদ গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই শতকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়।
তবে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধির শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে—এমন ইঙ্গিত দেওয়ার পর গত বছরের শেষ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকঋণের সুদ কমেছে এবং সামগ্রিকভাবে আর্থিক পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post