ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনফার্টিলিটি সেন্টারটি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিনই এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দম্পতিরা চিকিৎসা নিতে আসেন।
কিন্তু এই সেন্টারটির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবারই চোখে পড়ে একটি চিত্র। সেটি হল, প্রেসক্রিপশন হাতে অনেকগুলি বিমর্ষ নারীর মুখ। পুরুষের উপস্থিতি খুবই কম। পুরুষ তেমন একটা দেখা যায় না যেন এতে পুরুষের কোন দায় নেই!
সেদিন পত্রিকায় রিপোর্ট হলো নারী-পুরুষ কি কি কারণে একে অন্যকে ডিভোর্স দেয়। তার মধ্যে পুরুষ কর্তৃক ডিভোর্স দেওয়ার একটা প্রধানতম কারণ হল সন্তান না হওয়া। আমি ভাবি কী ঠুনকো ভিত্তির ওপর বিবাহের সম্পর্কগুলি গড়ে ওঠে। এমনকি ডাক্তারদের গ্রুপে কেউ সন্তান হচ্ছে না কোথায় চিকিৎসা নেওয়া যায় এরকম পরামর্শ চাইলে অনেক এসে (তারা ডাক্তারও বটে) পরামর্শ দেওয়া শুরু করেন আরেকটা বিয়ে করেন, ইসলামেতো নিষেধ নাই, ইত্যাদি।
এমনওতো হতে পারে সন্তান না হলেও শুধুমাত্র সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে নিয়ে তারা একটা জীবন সুন্দর করে পার করে দেওয়ার মতো মানসিকতা ও অনুরাগ সম্পন্ন? আমরা তাহলে কেন অন্যদের নিজের মতই মনে করে সেরকম উপদেশ দেই? সন্তান না হলে স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে হবে অথবা আরেকটি বিয়ে করতে হবে- এটা কি আত্মিক সম্পর্ক নাকি লেনদেনের চুক্তি হলো? মজার ব্যাপার হলো- সন্তান না হওয়ার কারণ শুধু নারী নয়, তা পুরুষের মধ্যেও থাকে এবং সে অনুপাত সমান সমান।
সেদিন এক অষ্টাদশী মেয়ে ভর্তি হয়েছে, তার ফুসফুসে কিছু সমস্যা। পরে জানতে পারি বিয়ের পর মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোন এক স্বাস্থ্য কর্মী বলে দিয়েছে তার আর বাচ্চা হবে না। ফলাফল ডিভোর্স। আমরা ফুসফুসের সমস্যাটাকে টিবি হিসাবে শনাক্ত করি এবং সঙ্গে এটাও যৌক্তিক কারণেই প্রতিভাত হয় মাসিক বন্ধ হওয়ার সমস্যাটাও জরায়ুর টিবির কারণেই যার মেডিকেল টার্ম ইনডোমেট্রিয়াল টিবি। যক্ষার ওষুধ খাওয়ার পর মেয়েটির মাসিক আবার ফিরে আসে।
মেয়েটির মায়ের বুকচাপা কান্না, হায় আর কটা দিন আগেই যদি হতো মাসিক ফিরে আসার ব্যাপারটা। তার প্রাক্তন স্বামী আবার বিয়ে করে ফেলেছে। বিবাহের সম্পর্কে যখন পারস্পরিক ভ্যালু বা মর্যাদা থাকে তখন কিন্তু একসাথে থাকা, এক সাথে বুড়ো হওয়াটাও বড় একটা অর্জন, সন্তান হলো কি হলো না সেটা হয়ে দাঁড়ায় খুবই গৌণ একটা ব্যাপার।
যৌনতা বা বংশরক্ষার আগে বিয়ের প্রধান দিক আত্মিক লেনদেন দুটি মানুষের মধ্যে। আমার কাছে এটি চুক্তি নয়, আত্মার বন্ধন। চুক্তিটা আত্মার সঙ্গে আত্মার।
এক সন্তানহীন দম্পতির স্বামী তার স্ত্রীকে বাংলাদেশ ভারতের এমন কোন জায়গা নেই পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়নি। কিন্তু তাকে যে সিম্পল একটা সিমেন এনালাইসিস টেস্ট করতে দেওয়া হয়েছিল তা কখনোই করেনি, অথবা করেও হয়তো রিপোর্ট চেপে গেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post