বাংলাদেশ বিমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সক্ষমতা ঘাটতির অভিযোগ বহুদিনের। তবুও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিজেদের হাতে রাখতে চায় বাংলাদেশ বিমান। এজন্য এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভারী যন্ত্রপাতিও কিনেছে সরকারি এ সংস্থাটি। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা – বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। তবে প্রতি মুহূর্তেঅব্যবস্থাপনার অভিযোগ বয়ে বেড়ানো সংস্থাটি এখনও ঘোচাতে পারেনি নিজেদের বদনাম তথা অদক্ষতা।
দেশের বিমানবন্দরগুলোতে দেশি-বিদেশি বিমান থেকে হালকা ও ভারী মালামাল লোডিং-আনলোডিং করাসহ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সব কাজ এককভাবে করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু লাগেজ থেকে চুরি, মালামালের ক্ষতিসহ নানা অভিযোগ থেকে কখনোই মুক্তি মেলেনি সংস্থাটির। এর মধ্যে দীর্ঘ পরিসরে গড়ে উঠা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নান্দনিক থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও নিজেদের হাতে রাখতে এখন মরিয়া রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি। যদিও তাদের দেয়া সেবার মান বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।
তথ্য বলছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টামিনাল চালু হলে এ বন্দরেই ফ্লাইটের সংখ্যা হবে দিগুণ। প্রতিদিন ওঠানামা করবে প্রায় তিনশ বিমান। পাশাপাশি দ্বিগুণ হবে কার্গো সার্ভিসও। বিস্তৃত পরিসরে এ সেবা একহাতে সামলাতে আধুনিক এবং ভারী যন্ত্রপাতি ও উপকরণ কিনে নিজেদের প্রস্তুত করছে বিমান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. শফিউল আজিম বলেন,
“আগে এটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর ছিল। সেখান থেকে আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ার পুরো সুযোগ যেহেতু এসেছে, সেক্ষেত্রে সেটির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য এরকম নতুন যন্ত্রপাতিই আমরা কিনছি। এগুলো বড় বড় বিমানবন্দরগুলোও ব্যবহার করে থাকে। যেমন- ব্যালটার, আনলোডার, হাইলিফটারসহ বিভিন্ন ধরনের ১৯ থেকে ২০ ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। তার পাশাপাশি নন ম্যাকানাইজ অনেক ধরনের যন্ত্রপাতিও রয়েছে। আমরা এসব যন্ত্রপাতিরই সর্বশেষ ভার্সন আনার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা যাত্রী এবং তার মালামালকে নিরাপত্তা দিতে পারি। পাশাপাশি যাত্রীর মালামালের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, আমরা তাও নিশ্চিত করতে চাই।”
এদিকে, এরই মধ্যে থার্ড টার্মিনালে বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিতে প্রাথমিকভাবে পরিচালনার কাজ জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) পাবে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ বিমানকেও সঙ্গে রাখা হতে পারে বলেও মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে সেবার মানে একবিন্দুও ছাড় দিতে নারাজ বেবিচক।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘গাউন্ড হ্যান্ডলিং কে করবে, তা জাইকার ওপর নির্ভর করবে। তারা যেহেতু পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে, সেহেতু তারাই নির্ধারণ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কথা হচ্ছে যে, উন্নত সেবা এবং পর্যাপ্ত মুনাফা দিতে হবে। এখন মুনাফা আয়ের জন্য যদি ভালো ধরনের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার না হয়, তাহলে এখানে গ্রাউন্ট হ্যান্ডেলিং করতে পারবে না। ফলে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত ট্রাফিক আসতে পারবে না। ওই জন্য তাদেরই দায়িত্ব হবে নিশ্চিত করা যে এটি বিমানকে দিয়ে করাবে, না আরেকটি অতিরিক্ত কোম্পানি নিয়ে আসা হবে।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, ‘আমাদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এখন জাইকা যদি মনে করে বিমানকে দিয়ে পারবে। তাহলে অবশ্যই ভালো। তারা যদি পারে, তাহলে বিমানই করুক। আমরা খুশি কারণ বিমান আমাদেরই একটি সংস্থা। জাইকা যদি বিমানের সক্ষমতা বাড়িয়ে সেটি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে অবশ্যই ভালো। কিন্তু যে কোম্পানিই আসুক, জাপানি বা বাংলাদেশি, আমাদের কিছু আসে যায় না। আমাদের শুধু চাই তাদেরকে অবশ্যই ভালো সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল ২০২৪ সালের শেষ দিকে পুরোদমে চালু করার লক্ষ্য রয়েছে। সিঙ্গাপুর চ্যাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মিত এই টার্মিনালে বার্ষিক ২৪ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা থাকবে। এর আগেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থাকে চূড়ান্ত করবে বেবিচক।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post