ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান হামলার কারণে লোহিত সাগরে চলাচল করা বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু কোম্পানি তাদের জাহাজের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিশ্বজুড়ে তেল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যে কারণে বিশ্বজুড়ে তেল এবং অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিপিং লাইন মারস্ক বলেছে, তারা আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপের আশপাশ দিয়ে কিছু জাহাজকে পুনরায় চলাচলের ব্যবস্থা করবে। লোহিত সাগর রুটে চলাচলকারী জাহাজের সুরক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দেশ জোট গড়ে আন্তর্জাতিক নৌ অভিযান শুরু করেছে। এই নিরাপত্তা জোটে যোগদানকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, বাহরাইন, নরওয়ে এবং স্পেন রয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘‘ইয়েমেন থেকে হুথিদের বেপরোয়া হামলায় সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহকে হুমকির মুখে ফেলেছে, নিরীহ নাবিকদের বিপদে মুখোমুখি করছে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।’’
তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের চালানের পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য পরিবহনের জন্য বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট লোহিত সাগর। এর দক্ষিণে বাব আল-মান্দেব প্রণালী— যা অশ্রু দ্বার নামেও পরিচিত— এবং উত্তরে সুয়েজ খাল।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বৈশ্বিক তেল জায়ান্ট কোম্পানি বিপি লোহিত সাগর দিয়ে তাদের সব ধরনের অপরিশোধিত তেলের জাহাজের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিপির প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক জায়ান্ট কোম্পানি শেল লোহিত সাগরের পরিস্থিতি সম্পর্কে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
লোহিত সাগরের বিকল্প রুট কেপ অব গুড হোপের আশপাশ দিয়ে জাহাজ চলাচল করলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়। আর এতে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অতিরিক্ত আরও ১০ দিনের বেশি সময়ের দরকার হবে। লোহিত সাগরের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বর্তমানে তেলের দামে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে তেলের দাম এক শতাংশ বেড়েছে। তবে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল বেড়ে ৭৮ ডলারের কাছাকাছি হয়েছে।
শিপিংবিষয়ক সংবাদপত্র লয়েডস লিস্টের প্রধান সম্পাদক রিচার্ড মিড বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেছেন, যদি ট্যাঙ্কারগুলো নতুন রুটে পরিচালনা করা হয়, স্পষ্টতই গতকাল বিপি কেপ অব গুড হোপের আশপাশ দিয়ে তাদের কিছু জাহাজকে পরিচালনা করতে শুরু করেছে, তাহলে এটার প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক তেলের বাজার অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। যে কারণে সাপ্লাই চেইনে এটা গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
মিড বলেন, জাহাজ পরিবহনের জন্য নতুন রুট নির্ধারণ করা হলে তা তেল ছাড়াও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর ওপর প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ তেল ও পণ্যসামগ্রী লোহিত সাগরের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। যা বার্ষিক এক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সমান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post