পাকিস্তানের বায়ুদূষণের সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে লাহোরের ধোঁয়াশার কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর শীতকালে লাহোরে প্রায় ১১ মিলিয়ন নাগরিক ফুসফুসের নানা জটিলতায় ভোগে।
পাকিস্তানের লাহোরে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো হয়েছে। দেশটির প্রাদেশিক সরকার জানায়, মূলত বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কমিয়ে আনতেই গত শনিবার প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতির পরীক্ষা চালানো হয়। কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে এর আনুষঙ্গিক উপকরণ নিয়ে একটি বিমান পাকিস্তানের ১০টি শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের লাহোর বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর।
পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী মহসিন নাকবি জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তায় তারা এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুটি বিমান নিয়ে আরব আমিরাতের একটি দল ১০-১২ দিন আগে এখানে এসে পৌঁছায়। তারা ৪৮টি ফ্লেয়ার ব্যবহার করেছে এই বৃষ্টি ঝরাতে।’
নাকবি আরো জানান, এই কৃত্রিম বৃষ্টি আদতে কাজ করেছে কি না, তা জানতে শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আরব আমিরাত কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাতে নিয়মিত ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য সিলভার আয়োডাইড নামে এক ধরনের হলদেটে লবণের মিশ্রণ মেঘে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্রিস্টালগুলো ঘনীভবনকে উদ্দীপিত করে যা পরে বৃষ্টি ঝরাতে সাহায্য করে।যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ আরো কয়েকটি দেশে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সামান্য বৃষ্টিও বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণ পাকিস্তানের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের এই নিম্ন তাপমাত্রায় নিম্নমানের ডিজেল ও মৌসুমি ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানোর ধোঁয়া মিলে বাতাসে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত কুয়াশার সৃষ্টি করেছে। প্রতি বছর শীতকালে লাহোরে ধোঁয়াশার কারণে প্রায় ১১ মিলিয়ন নাগরিক ফুসফুসের নানা জটিলতায় ভোগে।
গত শনিবারে লাহোরের বাতাসে ২.৫ পিএম দূষণকারী পদার্থ পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিপজ্জনক সীমার থেকে ৬৬ গুণ বেশি। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো বাতাস থেকে নিশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করছে। এভাবে দূষিত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া সৃষ্টি করছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দীর্ঘদিন কেউ এই বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে সহজেই ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবে।
বায়ুদূষণ রোধে পাকিস্তান সরকার রাস্তায় পানি ছিটানো, স্কুল, কারখানা ও বাজার বন্ধের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা খুব বেশি সফলতা এনে দিতে পারেনি। তাই নাকবি জানান, দূষণ রোধের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে কৃত্রিম বৃষ্টি নিয়েই সরকারকে আরো কাজ করতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post