মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ওই নারীর নাম জেনিফার। তিনি রেডিট নামে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তার পোস্টটি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শত শত মানুষ তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেখক লরেন কানাডের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাকে ‘‘ক্লিনিক্যালি ডেড’’ ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি চেতনা ফিরে পান। ওই নারী বলেছেন, তিনি চেতনা ফিরে পাওয়ার পর গত সপ্তাহের সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলেন।
রেডিটে ‘‘আস্ক মি এনিথিং’’ লেখা পোস্ট করে এই বিষয়ে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের জবাবে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। লরেন কানাডে বলেছেন, চেতনা হারিয়ে ফেলার পর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দু’দিন কোমায় ছিলেন তিনি। পরে চেতনা ফিরে পান। অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বামী সিপিআর শুরু করায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন লরেন। তিনি বলেন, আমার কাছে সবসময়ের ‘‘বীর’’ আমার স্বামী।
‘‘গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়িতে হঠাৎ করে আমার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। আমার স্বামী জরুরি সেবা নম্বর ৯১১-এ ফোন করেন। এর পরপরই তিনি আমাকে সিপিআর করা শুরু করেন। আইসিইউতে ৯ দিন থাকার পর আমাকে ‘জ্ঞানগতভাবে অক্ষত’’ ঘোষণা করা হয়। তবে এমআরআইয়ে মস্তিষ্কের কোনও দৃশ্যমান ক্ষতি দেখা যায়নি।’’
রেডিট ব্যবহারকারীরা তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন। চেতনা হারিয়ে ফেলার পর তার সাথে সাথে কী ঘটেছিল এবং যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে, সেসব বিষয়ে জানতে চান অনেকে। ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বইও লিখেছেন লরেন কানাডে।
তিনি বলেন, চেতনা ফিরে পাওয়ার পর ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে মৃগীরোগীদের মতো খিঁচুনি অনুভব করা সত্ত্বেও তার ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রামের ফল— এই পরীক্ষায় মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপ করা হয়, স্বাভাবিক আসে।
লরেন বলেন, ‘‘আমার স্বামী ৪ মিনিট ধরে সিপিআর করেছিলেন এবং কী করতে হবে সেই বিষয়ে তাকে জানিয়েছিলেন একজন অপারেটর। যদিও অতীতে তার এই বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। সৌভাগ্যক্রমে আমরা একটি ফায়ার স্টেশনের কাছাকাছি ছিলাম এবং জরুরি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে বাসায় পৌঁছেছিলেন।’’
একজন ব্যবহারকারীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কোভিড-১৯ জটিলতার কারণে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল বলে প্যারামেডিকরা জানিয়েছেন। এ জন্য আইসিইউতে নেওয়ার সময় তার করোনা পরীক্ষাও করা হয়। পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়।
মেডিক্যালের পরিভাষায় লরেন কানাডে ‘‘লাজারাস ইফেক্ট বা অটোরিসাসিটেশন’’ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে এই ধরনের ঘটনা বেশ বিরল। এতে একজন রোগীর ‘‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হলেও হঠাৎ করে প্রাণ ফিরে পাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।’’
নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন এই নারীর পুনরুজ্জীবনের ঘটনাটি বেশ অসাধারণ। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুনরুজ্জীবিত ব্যক্তিরা দীর্ঘজীবী হন না। ১৯৮২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৬৫টি পুনরুজ্জীবনের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post