আমরা সবাই জানি, একটি দিনে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু যদি একদিন ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৫ ঘণ্টা হয়? তাহলে কী হবে? শুনে অবাক লাগলেও, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমনটা হতে পারে। পৃথিবীর আহ্নিক গতি ধীরে ধীরে কমছে। এর ফলে দিনের দৈর্ঘ্যও ক্রমশ বাড়ছে। প্রতি শতাব্দীতে প্রায় দুই মিলিসেকেন্ড হারে পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমছে। এর মানে হল, আজকের ২৪ ঘণ্টা আগামী শতাব্দীতে ২৪ ঘণ্টা ১২ মিনিট হয়ে যাবে। আর আরও কয়েক শতাব্দী পর, দিনের দৈর্ঘ্য ২৫ ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারে।
পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর দাঁড়িয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) ঘুরছে। একে বলে আহ্নিক গতি। এখন পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘণ্টায় নিজের অক্ষের চারপাশে এক বার ঘুরছে। এই গতির কারণেই হয় দিন এবং রাত। পৃথিবীর সব অংশ সূর্যের আলো পায়। আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন হয়। আহ্নিক গতির কারণে উত্তর গোলার্ধে বায়ু এবং জল একটু ডান দিকে বেঁকে যায়। এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এই কারণেই আবহাওয়া এবং সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন হয়।
প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিল পৃথিবী। গ্যাস এবং ধুলো থেকে ক্রমে আজ এই আকার নিয়েছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সেগুলি জমাট বাঁধতে শুরু করে। তখন থেকেই শুরু হয় আহ্নিক গতি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল বলছে, যেভাবে পৃথিবী নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরছে, তাতে দিনের সময়সীমা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভবিষ্যতে আরও বেশি ক্ষণ পৃথিবীর সর্বত্র স্থায়ী হতে পারে দিন।
অর্থাৎ এখন এক জায়গায় নির্দিষ্ট ঋতুতে যত ক্ষণ থাকে দিনের আলো, ভবিষ্যতে সেই সময়সীমা বৃদ্ধি পেতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ওই দলটি বহু বছর ধরে পৃথিবীর আহ্নিক গতির উপর নজর রাখছে। তারাই মনে করছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি ঘণ্টা থাকতে পারে দিনের আলো।
কোন পরিস্থিতিতে হতে পারে এ রকম? ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৫ ঘণ্টায় এক দিন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে পৃথিবীর আহ্নিক গতির প্রকৃতি এবং গতিতে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, জলবায়ু এবং পরিবেশের পরিবর্তনের কারণেই পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে বদল এসেছে।
জার্মানির মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক মনে করেন, এভাবে আহ্নিক গতিতে বদল আসতে থাকলে দিনের দৈর্ঘ্যের হেরফের হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী উলরিখ স্ক্রিবার জানিয়েছেন, বেশ কিছু ভৌগোলিক এবং পরিবেশগত কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে আহ্নিক গতির প্রকৃতি। রিং লেসার প্রযুক্তির মাধ্যমে আহ্নিক গতির পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন মিউনিখের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। মাটির ২০ ফুট গভীরে রাখা থাকে এই প্রযুক্তি।
বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই যে ২৫ ঘণ্টায় এক দিন হবে, এমন নয়। এ রকম হতে বহু বছর সময় লাগবে। তবে যখন হবে, তখন পৃথিবীর অনেকটা কাছে চলে আসবে চাঁদ। পৃথিবীতে স্থল এবং জলভাগের অবস্থান, মাত্রা, এ সবের উপর নির্ভর করে আহ্নিক গতি।
এ সবের ওঠাপড়ার কারণে ধীরে ধীরে বদল হতে পারে আহ্নিক গতির। তবে তা খুব দ্রুত নয়। কয়েক কোটি বছর লাগতে পারে।বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, এক সময় ২৩ ঘণ্টায় পৃথিবীতে এক দিন হত। সে কোটি কোটি বছর আগের কথা। সে সময় পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত ডায়নোসর।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ২০ কোটি বছর পর পৃথিবীর আহ্নিক গতির পরিবর্তনের ফলে এক দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা থেকে বেড়ে ২৫ ঘণ্টা হতে পারে। এই পরিবর্তন পৃথিবীর আবহাওয়া, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post