বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠের নিচে পৃথিবীর একটি নতুন স্তর আবিষ্কার করেছেন। এই স্তরটি অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের মধ্যে রয়েছে এবং এটি কিছুটা গলিত পাথরের মতো অবস্থায় রয়েছে।
এই অজানা স্তরটি অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের মধ্যে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, অ্যাসথেনোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে একটি দুর্বল স্তর, যা চলমান অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই গবেষণা থেকে একাধিক নতুন বিষয় জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যাবে। যার ফলে ভবিষ্যতে আমরা ভূমিকম্প হওয়ার আগেই সেই সম্পর্কে অবগত হতে পারবো।
উল্লেখ্য যে, তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ঘটা সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরণের গবেষণার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। যেহেতু এই স্তরটি টেকটনিক প্লেটের ঠিক নিচে রয়েছে তাই ওই প্লেটকে চলমান বা স্থিতিশীল রাখতে এটি একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এমন পরিস্থিতিতে, প্লেটগুলিতে কখন আলোড়ন তৈরি হতে চলেছে তা গবেষণা মারফত জানা যেতে পারে।
গবেষণায় কি দেখা গেছে: টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, আবিষ্কৃত এই আঠালো স্তরটি একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর পরিধি ভূপৃষ্ঠের অনেক নিচে পর্যন্ত রয়েছে। পাশাপাশি, অনুমান করা হচ্ছে যে, এটি আমাদের গ্রহের প্রায় ৪৪ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।
দিন চারেক আগে নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে গলিত শিলাগুলির আরও গবেষণার মাধ্যমে সম্ভবত এটিও জানা যাবে যে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কি পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। যদিও, বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এটা বুঝতে সক্ষম হননি যে কেন এই পাথরের মতো স্তরটি গলে যাওয়ার মত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে কিছুকাল আগেই বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণন এবং পরিবর্তন এখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই গতিশীল গলিত শিলাগুলির দিকে তাকিয়ে এবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পৃথিবীতে আসন্ন বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাবে: সৃষ্টির পর থেকেই আমাদের গ্রহে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটেছে। এমনকি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এহেন পরিবর্তন অনেক প্রজাতির গঠন এবং বিলুপ্তির কারণও হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডাইনোসরের মতো শক্তিশালী প্রজাতি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আবার হোমো সেপিয়েন্স মানে মানুষরাও এই পরিবর্তনেরই দান। যদিও, বর্তমানে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গতিবিধি থেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কিভাবে পাওয়া যাবে সেই দিকেই আলোকপাত করা হচ্ছে।
ভূমিকম্প সম্পর্কে আগে থেকে জানা কঠিন কেন: এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া খুবই কঠিন। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে নিজেই স্বীকার করেছে যে, ভূমিকম্পের পরিবর্তিত রূপ তার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মূলত, এটি একটি ট্রেন নয়, যা হালকাভাবে চলতে শুরু করে এবং তারপর গতি বৃদ্ধি পায়।
বরং এটি একটি আকষ্মিক বিপর্যয়। যা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ দেয় না। বিশেষ করে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্নের অভাব এটিকে আরও কঠিন করে তোলে। এই কারণেই বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দিতে পেরেছেন যে, বিশ্বের কোন অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু কখন যে দুর্যোগ আসবে, তার কোনো ধারণা তারা দিতে পারেন না।
কয়েক সেকেন্ড আগে শনাক্ত করা যেতে পারে: তবে, এই সংক্রান্ত গবেষণা ইতিমধ্যেই চলছে। কিছু সময় আগে জিওলজিক্যাল সার্ভে একটি আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছে। শেক-অ্যালার্ট নামের এই সিস্টেমটি কোথায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে তা বলতে সক্ষম হবে। তবে সমস্যা হল, এটি ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ড আগে এটি বলতে পারবে।
অর্থাৎ, ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থাটি বর্তমানে কয়েক সেকেন্ড আগে সতর্ক করতে সক্ষম। তবে, ভবিষ্যতে পৃথিবীর অভ্যন্তরের টেকটনিক প্লেটের নিচে চলমান স্তরের খোঁজ আরও গভীর হলে, ভূমিকম্পের কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টা আগেও সতর্কতা পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post