আফ্রিকার লেসোথোতে পাখির দেহের জীবাশ্মের মতো পায়ের ছাপের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। পায়ের ছাপগুলোর বয়স ২১ কোটি বছরেরও বেশি, যা পাখির প্রাচীনতম দেহের জীবাশ্মের চেয়েও বেশি। গবেষকরা প্রাথমিকভাবে এই পায়ের ছাপগুলোকে অজানা কোনো প্রাণীর বা ডাইনোসরের পায়ের ছাপ বলে ধারণা করছেন।
এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ মিয়েনগাহ আব্রাহামস ও এমিস বোর্ডি জানিয়েছেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে পাখিদের প্রায় ১০ হাজার জীবিত প্রজাতি রয়েছে। পাখিদের প্রাথমিক বিবর্তনের ইতিহাস এখনো অজানা। ধারণা করা হয়, পাখিরা আদি ডাইনোসরের বিবর্তনের ধারায় এসেছে। ডাইনোসরদের মধ্যে থেরোপড ডাইনোসর থেকে পাখিদের বিকাশ। থেরোপড ডাইনোসর দলের সদস্য মানিরাপ্টোরাকে পাখির আদি পুরুষ হিসেবে মনে করা হয়।
যদিও এ পাখির জন্মের সময় নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। পাখিদের প্রাচীনতম দেহের জীবাশ্মের তথ্যগুলো মূলত মধ্য থেকে শেষ জুরাসিক সময়ের মধ্যে। সময়কাল ১৫ থেকে ১৬ কোটি বছর আগের। অরোর্নিস, অ্যাঙ্কিওর্নিস, আর্কিওপ্টেরিক্স এবং জিয়াওটিংগিয়াদের আদি পাখির পূর্বসূরি মনে করা হয়। এবার ট্রায়াসিক যুগের শেষ সময়কার পাখির দেহের জীবাশ্মের মতো দেখতে তিন আঙুলের পায়ের ছাপের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পায়ের ছাপগুলো সম্ভবত প্রারম্ভিক বা প্রাক-জুরাসিক যুগে উদ্ভূত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ট্রায়াসিক উত্তর যুগের কিছু প্রাণীর দেহের জীবাশ্মের নমুনা পাওয়া যায়, যেগুলো দেখতে প্রোটোভিস পাখির মতো। তবে প্রোটোভিস পাখি না প্রাণী তা নিয়ে তথ্য-প্রমাণের অভাব রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পাখির উৎপত্তি ও ডাইনোসরের বিবর্তন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েই গেছে বিজ্ঞানীদের কাছে। আর তাই প্রাচীন পাখির মতো প্রাণীর জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা প্যালিওন্টোলজিকাল আবিষ্কারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ আফ্রিকার লেসোথোর চারটি স্থানে জীবাশ্মযুক্ত পায়ের ছাপের সন্ধান পেতে গবেষণা চালানো হয়। দীর্ঘদিন গবেষণার পর মাফুটসেংয়ে ৮০ মিটার ট্র্যাকসাইট থেকে পায়ের ছাপের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে অনেক গবেষক পায়ের ছাপগুলোকে অর্নিথিসিয়ান ডাইনোসরের বলে মনে করছেন।
অন্যদের ধারণা, পায়ের ছাপগুলো পাখির মতো কোনো প্রাণীর। নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ট্রাইসারোপডিস্কাস মরফোটাইপের দুটি ধরন রয়েছে, যার একটির পাখির মতো পায়ের ছাপ ছিল, আর অন্যটি সাধারণ ডাইনোসরের মতো। এই পায়ের ছাপে মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ছাপগুলোর বয়স ২১ কোটি বছরেরও বেশি পুরোনো।
গবেষকেরা পায়ের ছাপের আকৃতি, আকার এবং অবস্থান বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। পায়ের ছাপগুলোর আকার ও আকৃতি প্রাথমিক পর্যায়ের ডাইনোসরের পায়ের ছাপের সাথে মিলে যায়। তবে, পায়ের ছাপগুলোতে আঙুলের ছাপ নেই, যা পাখি বা সরীসৃপের পায়ের ছাপে দেখা যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post