ঋণের সুদহারের লিমিট তুলে দেওয়ার পর, আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করে। পলিসি রেট বাড়ার ফলে, এই হার আরও বাড়ছে। ফলে, সঞ্চয়কারীরা সুদের হার বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দেওয়ায় তা সঞ্চয়কারীদেরও জন্যও সুসংবাদ। গত জুনে ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে নেওয়া পর থেকেই সব ধরনের আমানতের সুদের হার বাড়তে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে আমানতের গড় সুদের হার ছিল চার দশমিক ৫২ শতাংশ। এটি গত জুনে ছিল চার দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল চার দশমিক শূন্য নয় শতাংশ।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আমানতের সুদের হার অনেক বেড়েছে। বর্তমানে আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার সাড়ে নয় শতাংশ।’ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কল মানি মার্কেটেও সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আমানতের সুদের হারও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গতকাল সোমবার কল মানির গড় সুদের হার ছিল আট দশমিক ৩৬ শতাংশ। ১৪ দিন মেয়াদি কল মানির সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববার রেপো রেট বা পলিসি রেটের সুদের হার বাড়িয়ে সাত দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে। গত ১৯ মাসের মধ্যে আটবার তা বাড়ানো হলো। তবে এর ফলে মূল্যস্ফীতি কতোটা কমবে তা নিয়ে মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
অক্টোবরে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৯৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় শতাংশের চেয়ে কিছু বেশি। এ ছাড়াও, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের সময় স্মার্ট (ছয় মাসের মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) হারে মার্জিন ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ ঋণের হার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। কারণ রেফারেন্স রেট দাঁড়িয়েছে সাত দশমিক ৪৩ শতাংশে।
মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, ঋণের সুদের হার বাড়াতে কিছুটা সময় লাগলেও তা বাড়ানোর ঘোষণার পর আমানতের সুদের হার বাড়তে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে আছে। অন্যদিকে আবার কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য ঘাটতি নেই। এই অসামঞ্জস্যতা বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে।’ ‘আমাদের ব্যাংক আমানতের ওপর সর্বোচ্চ নয় শতাংশ সুদ দিচ্ছে,’ উল্লেখ করে ঢাকার এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তবে এটি সঞ্চয়ের পরিমাণ ও তা জমা রাখার মেয়াদের ওপর নির্ভর করে। টাকার পরিমাণ যত বেশি, সুদের হারও তত। আমানতকারীরা যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য টাকা জমা রাখতে রাজি হন তবে তাদেরকে বেশি পরিমাণ সুদ দেওয়া হয়।’
জামালপুরে কর্মরত অপর এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সঞ্চয় আকৃষ্ট করতে আমাদের ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার বাড়িয়েছে।’ সঞ্চয়ের ওপর সুদের ক্রমবর্ধমান হার ব্যাংকগুলোয় সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়ের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে সাড়ে নয় শতাংশ। গত জুনে তা ছিল আট দশমিক চার শতাংশ। জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি বাজারে টাকার যোগান বাড়িয়ে দেবে। সঞ্চয়কারীরা ভালো সুবিধা পেলে আবার ব্যাংকে ফিরে আসবেন।’
তার মতে, ‘সঞ্চয়ের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরের সঞ্চয় কমছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর বাইরে সঞ্চয় কমে গেছে তিন হাজার ৪০ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post