দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে জটিলতা শুরু হয়।
ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্মসনদ ও পাসপোর্টে তথ্যের গরমিল থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিলানে কনস্যুলেট অফিস থেকে এনআইডি প্রদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।
দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা কেবল নিজেদের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ ইতালি প্রবাসী কোন বাংলাদেশি নাগরিক দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে হলে তাকে তার পাসপোর্ট অনুযায়ী হুবহু তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। যদি পাসপোর্ট ও জন্মসনদের মাঝে কোন তথ্য অমিল থাকে তাহলে সেই আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এমনই তথ্যগত জটিলতায় আছেন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করা মাদারীপুরের রাজৈর থেকে আসা প্রবাসী শফিকুল ইসলাম (২৭)। ইতালির মিলানে মানি ট্রান্সফারের ব্যবসা করেন তিনি।
শফিকুল গণমাধ্যমকে বলেন, “বিদেশে আসার সময় আমার পাসপোর্টে বাবার নামের আগে ভুলে ‘MD’ যোগ করা হয়নি। তবে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নামের আগে ‘MD’ রয়েছে। যদিও পরবর্তীতে তার পরিচয়পত্র ও অন্যান্য প্রমাণাদি দাখিল করে জন্মসনদ সংশোধন করে নামের আগে ‘MD’ যোগ করা হয়েছে। কিন্তু আমার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় এখন পর্যন্ত পাসপোর্টে বাবার নামের আগে ‘MD’ যোগ করতে পারিনি। এতে আমাকে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
“সম্প্রতি যখন শুনেছি ইতালিতে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তখন দূতাবাসে গেলে তারা আমাকে জানায় যে আমার পাসপোর্টে বর্তমানে যেসব তথ্য আছে হুবহু সেই অনুযায়ী আমাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। কিন্তু এতে আমার পাসপোর্টে বাবার নাম আগের মতই ভুল থেকে যাবে।” একই রকম তথ্যের গরমিলে জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন মাদারীপুর থেকে আসা আরেক প্রবাসী ইনতেজারুল ইসলাম (২৯)। পেশায় একটি জাপানি রেস্টুরেন্টের শেফ ইনতেজারুল প্রায় ছয় বছর ধরে মিলানে বসবাস করছেন।
তিনি বলেন, “অতীতে যখন পাসপোর্ট করি, তখন আমার মায়ের নামে একটা অক্ষর ভুল আসে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও আমার জন্মসনদ অনুযায়ী মায়ের নাম ‘SHAHIDA BEGUM’, কিন্তু আমার পাসপোর্টে মায়ের নাম রয়েছে ‘SHOHIDA BEGUM’। দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, এখন যদি আমার পাসপোর্ট অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, তাহলে মায়ের নামে এই ভুলটি থেকে যাবে। এটা সমাধানের জন্য আমার প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এবং পরে পাসপোর্ট সংশোধন করতে হবে।”
প্রবাসী শফিকুল ইসলাম ও ইনতেজারুল ইসলামের অভিমত, যদি প্রথমেই তাদের জন্মসনদ অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, তাহলে খুব সহজেই পাসপোর্টের ছোটখাট ভুলগুলো সমাধান করা যাবে।
এ বিষয়ে ইতালিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম বলেন, “অনেক বাংলাদেশি বিভিন্নভাবে ইতালিতে আসার পর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করে তাদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কমিয়ে ফেলেন। অনেকে আবার নিজের পুরো নাম বা বাবার নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ থেকে জন্মসনদ করিয়ে আনেন। সেই জন্মসনদ দিয়ে পরবর্তীতে আমাদের এখানে পাসপোর্টের জন্য আবেদন আসে। কিন্তু আগের পাসপোর্ট ও নতুন আবেদনে ভিন্ন তথ্য থাকায় বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্টটি আটকে দেওয়া দেয়।”
প্রবাসীরা জানান, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা আবেদন করছেন তাদের মধ্যে অনেকে কেবল পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে আবেদন করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে যদি পাসপোর্ট অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, তাহলে পাসপোর্টের ওই ভুলগুলো থেকে যাবে। অথবা পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এবং পরবর্তীতে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন করার আবেদন করতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রবাসীরা চাচ্ছেন পাসপোর্ট নয়, অনলাইন ভেরিফাইড জন্মসনদের তথ্য অনুযায়ী যেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পাসপোর্টে থাকা নামের বানান ভুলগুলোর সমাধান হবে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা নির্দেশনার পর দূতাবাসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন জমা দিতে আসা প্রবাসীদের জন্মসনদ না থাকায় দূতাবাসকে ‘ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন গ্রহণ করছি। কিন্তু অনেক প্রবাসীর জন্মসনদ নেই। তাই তাদের ক্ষেত্রে আমরা পূর্বের পাসপোর্টকে প্রাধান্য দিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করব।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post