জীবিকার তাগিদে প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক দূর প্রবাসে পাড়ি জমান। তাদের মধ্যে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন সুখী জীবনের। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। প্রবাস জীবনের দুই রূপ আছে। এক রূপ হলো সুখের, আরেক রূপ হলো দুর্ভোগের।
তদুপরি নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে কফিল তথা মালিকের মামলা। মূলত, মামলার উদ্দেশ্য প্রবাসীদের হয়রানি; মামলার কোনো রকম তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে থাকে না। কফিলের দেওয়া মিথ্যা মামলার কারণে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে পারেন না; থাকতে হয় সার্বক্ষণিক ভয়ের মধ্যে। মামলার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো কফিলের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ বা বাইরে কাজ করা। এ ক্ষেত্রে কফিল অনেকটা বাধ্য হন মামলা করতে।
কারণ আমেল (কর্মী) যদি বাইরে কোথাও কাজ করা অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন, তাহলে কফিলকে জরিমানা গুনতে হয়। তাই আমেল পালিয়ে গেলে কফিল আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) ব্লক করে দেন। এতে কফিলকে জানাতে হয় তাঁর আমেল কেন পালিয়েছেন; এর অংশ হিসেবে কফিল মামলা দেন। অনেক সময় নারী কর্মীদের দেশে যেতে না দেওয়া বিষয়ে কফিলের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর ক্ষোভ থেকেও কফিল মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকেন। এর বাইরেও নানা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকেন।
কফিলের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও কাজের জন্য পালিয়ে গেলে কফিল টাকা চুরির মামলা দিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ চুরির মামলায় টাকার অঙ্ক থাকে বিশাল, যা বাংলাদেশি টাকার হিসাবে কোটি টাকার ওপরে। বাসায় যারা পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেতন খুব একটা ভালো অবস্থায় না থাকায় বেশির ভাগই পালিয়ে অন্যত্র কাজ করার চেষ্টা করে। তাদের ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির মামলাও দেওয়া হয়।
কারণ আরবের নারীরা কোর্টে বললেই হয় তিনি যৌন হয়রানির স্বীকার; এতে প্রমাণের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বাসায় কাজ করা নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অনেকে স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির মামলা দিয়ে থাকেন।
কফিলের মিথ্যা মামলার শিকার হলে দেশে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে দীর্ঘমেয়াদি জেল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সার্বক্ষণিক পালিয়ে থাকতে হয়। আকামা শেষে তা আর নবায়ন করে পারেন না। এ ছাড়া নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কফিলের মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হলো সতর্কতা। খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোনো সাদা কাগজে বা অন্য কোনো কাগজে স্বাক্ষর বা টিপ সই না নিতে পারে। যদি কফিল বেতন আটকে রাখে অথবা ডিউটি অতিরিক্ত করে দেয় তাহলে পালিয়ে না গিয়ে মক্তব আমেলে (মিনিস্ট্রি অব লেবার) অভিযোগ করতে পারেন।
কফিলের মিথ্যা মামলার শিকার হলে আপনি অবশ্যই মক্তব আমেলে কফিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন। এতে বিষয়টির তদন্ত হয়।
আপনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ থাকলে, আপনার কফিলকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। যদি কফিল নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত না হন বা কয়েকবার অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে আপনি নির্দোষ ঘোষণা করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post