মালয়েশিয়ায় চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। ৬ জনের কাছ থেকে তারা এ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ মো. ফারুক নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ফারুক নেত্রকোনা জেলহাজতে রয়েছে। মামলার বাদী বিষয়টি গতকাল নেত্রকোনা জেলা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের জানান।
অভিযোগে জানা যায়,
“নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের শিয়াদার গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. রাসেল মিয়া মালয়েশিয়ায় থাকেন। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার ছোট মনোহরদী গ্রামের ইদ্রিছ আলীর ছেলে মো. ফারুকের। পরিচয়ের সুবাদে দু’জনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে।”
একপর্যায়ে ফারুক ভিসা সংগ্রহ করে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর প্রস্তাব দেয় রাসেলকে। পরে গত বছরের মাঝামাঝি সময় রাসেল তার ভাই মো. রেফাজ উদ্দিনকে ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এই প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ই আগস্ট রেফাজ উদ্দিন এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া প্রবাসী ফারুকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন।ফারুক তার ভাই রোমান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
পরে মোহনগঞ্জের শিয়াদার গ্রামের মো. রেফাজ উদ্দিন, করমশ্রী গ্রামের মো. শাহীন মিয়া, তার ভাই মো. মাসুম মিয়া, একই উপজেলার শিয়াদার গ্রামের মো. হাকিম, ফাগুয়া গ্রামের মো. ইমরান মিয়া, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার হরিপুর গ্রামের মো. তোফাজ্জল মিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। মালয়েশিয়া পাঠানো বাবদ প্রত্যেককে ৬ লাখ টাকা করে দেয়ার জন্য বলেন নারায়ণগঞ্জের রোমান মিয়া।
এতে দু’পক্ষই রাজী হয়। পরে রোমান মিয়া নেত্রকোনায় আসেন এবং টাকা দেয়ার জন্য ৬ জনকে বলেন। তাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমে কয়েক দফায় ২২ লাখ ৯১ হাজার ৮০ টাকা দেয়া হয়। পরে গত ৩০শে আগস্ট মো. ফারুক মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে নেত্রকোনায় আসেন এবং আরও ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯২০ টাকা নেন।
কিছুদিন পর ফারুক মিয়া মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টাকা দেয়া ওই ৬ জন যুবককে জানান তাদের ১৬ই সেপ্টেম্বর ফ্লাইট। ওই ৬ যুবকের জন্য ভুয়া টিকিট তৈরি করে তাদের দেয়া হয়। এরমধ্যে ফারুক তার ভাই রোমান মিয়াকে বিদেশ পাঠিয়ে দেন। মালেয়েশিয়াগামী ওই ৬ যুবককে ১৫ই সেপ্টেম্বর মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান ফারুক।
সেখানে তাদের একটি কক্ষে ৫দিন আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ফারুক ও তার লোকজন। একপর্যায়ে ফারুক মিয়া তার লোকজন নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কৌশলে মালয়েশিয়াগামী যুবকরা বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন। এ ব্যাপারে গত ৩০শে অক্টোবর মো. রেফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রতারণার অভিযোগে মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল নেত্রকোনায় মামলা করেন।
আদালত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নেত্রকোনা মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩রা নভেম্বর নেত্রকোনা মডেল থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। পুলিশ ওইদিন রাতে মো. ফারুককে নারায়ণগঞ্জের ছোট মনোহরদী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন,
“পুলিশের অভিযানে প্রতারণার মামলার একজন আসামি গ্রেপ্তার। অন্য আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post