বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী জানুয়ারির মধ্যে জাপানের নারিতা বিমানবন্দর থেকে কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে এয়ার কানাডার বিমানে করে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার এবং যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম বলেন,
‘আমরা ইতোমধ্যেই কোড শেয়ারিং চুক্তির বিষয়ে এয়ার কানাডার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি এবং আমরা জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে এটি কার্যকরের আশা করছি।’
কোড শেয়ারিং হল একটি বিপণন ব্যবস্থা যেখানে একটি এয়ারলাইন্স অন্য এয়ারলাইন্স দ্বারা পরিচালিত একটি ফ্লাইটে তার মনোনীত কোড রাখে এবং সেই ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি করে। কোড শেয়ারিং চুক্তির পর একজন কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রী বিমানের বিমানে চড়ে নারিতা যাবেন এবং সেখানে যাত্রাবিরতির পর তিনি এক টিকিটেই বোর্ডিং পাস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দ্বারা জারি করা লাগেজ ট্যাগ নিয়ে এয়ার কানাডার বিমানে নারিতা থেকে ভ্যাঙ্কুভার বা লস অ্যাঙ্গেলসে পৌঁছাতে পারবেন।
বিমানের সিইও আশা করেছিলেন, কোড শেয়ারিং জাতীয় পতাকাবাহী ফ্লাইটে কানাডা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের সাথে তার নারিতা ফ্লাইটে প্রচুর ট্রাফিক পেতে সহায়তা করবে কারণ, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ভ্যাঙ্কুভার এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করছেন।
বিমানের ছয় ঘণ্টার নারিতা রুট এবং প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নারিতা থেকে ভ্যাঙ্কুভার বা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছানোর জন্য ৯ ঘন্টার ফ্লাইটসহ মোট ১৫ ঘন্টা সময় লাগবে এবং এতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় বাঁচবে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলগামী যাত্রীরা সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ব্যবহার করে সিঙ্গাপুর বা কুয়ালালামপুরে লেওভার নিয়ে ভ্যাঙ্কুভার বা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছানোর জন্য ফ্লাইটে মোট ২০ ঘন্টার বেশি সময় লাগে।
বাংলাদেশী বিশাল কানাডিয়ান প্রবাসীরা ইতোমধ্যেই বিমানের ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা ফ্লাইটকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। কিন্তু জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থার কাছে এখনও কানাডিয়ান বা মার্কিন পশ্চিম উপকূল ভ্রমণকারীদের জন্য অফার করার কোনো বিকল্প নেই।
আজম বলেন, ‘মনে রাখবেন আমরা আমাদের যাত্রীদের আরও রুট সংযোগ অফার করতে চাই যেমন সারা বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো তাদের বাজারে উপস্থিতি এবং প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা প্রসারিত করার জন্য কোড-শেয়ার ব্যবস্থা তৈরি করে চলেছে।’ বিমান প্রধান আশা প্রকাশ করেন, ১৭ বছর পর গত সেপ্টেম্বরে পুনরায় চালু হওয়া ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে আরও জনপ্রিয় হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের ঢাকা-নারিতা রুটে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি এখন পর্যন্ত আমরা রুটের লোড ফ্যাক্টর নিয়ে সন্তুষ্ট।’ বাংলাদেশি ও জাপানি যাত্রী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক নেপালি নাগরিক এবং বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিকও বিমানের তিনটি সাপ্তাহিক ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইট ব্যবহার করছেন।
বিমানের ডিরেক্টর মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৫০ শতাংশ প্যাসেঞ্জার লোড ফ্যাক্টর দিয়ে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইট শুরু করেছি তবে বর্তমানে আমাদের উভয় প্রান্তেই প্রায় ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টর রয়েছে।’ এয়ার কানাডার সাথে কোড শেয়ার করার পর ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইটের লোড ফ্যাক্টর প্রায় শতভাগ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সালাউদ্দিন আরও বলেন, বর্তমানে ভ্যাঙ্কুভার এবং ক্যালিফোর্নিয়া রুটে চলাচলকারী ফ্লাইটের ভাড়ার চেয়ে বিমানের নারিতা রুটের ফ্লাইটে কানাডা এবং মার্কিন পশ্চিম উপকূলগামী যাত্রীদের জন্য ভাড়া কমতে পারে। বিমান অন্যান্য এয়ারলাইন্স ইন্টারলিঙ্কিং বা কোড শেয়ারিংয়ের চেষ্টা করছে যাতে পতাকাবাহী তার যাত্রীদেরকে ৩৬০ ডিগ্রি এয়ারলাইনের মতো জাপানের বাইরে সিডনিসহ অন্যান্য রুট অফার করতে পারে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এয়ার সার্ভিস চুক্তির আওতায় টোকিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে সে দেশে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে পঞ্চম স্বাধীনতা সুবিধা ভোগ করার অনুমতি দেয়।
একটি এয়ারলাইন্সকে তার নিজের দেশ থেকে দ্বিতীয় দেশে এবং সেই দেশ থেকে তৃতীয় দেশে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার অধিকারকে পঞ্চম স্বাধীনতা বলা হয়। এই অধিকারের ফলে একটি এয়ারলাইন্স তার নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post