ঢাকা থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে গত ২৪ অক্টোবর ননসিডিউল সরাসরি চার্টার্ড ফ্লাইট চালু করে এয়ার প্রিমিয়া। প্রতি সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়ে ৩ টি ফ্লাইট পরিচলনা করে তারা।
তবে ফ্লাইট পরিচালনার এক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া ১৩টি নির্ধারিত ফ্লাইটের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫টি ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে এয়ার প্রিমিয়া কর্তৃপক্ষ। এতে চরম দুর্ভোগে পরে ঢাকা-সিউল রুটের শত শত যাত্রী।
জানা যায়, সপ্তাহে একটি নির্ধারিত ফ্লাইটের পরিবর্তে হুট করেই এয়ার প্রিমিয়া কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনে একটি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়াতে বাঁধে এই বিপত্তি। ইতিমধ্যে এয়ার প্রিমিয়া ঢাকা-সিউল রুটে তাদের নির্ধারিত চলতি বছরের ১৪ ও ২১ নভেম্বর, ডিসেম্বরের ২টি এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারির ১ টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের অনিয়ম দেশের এভিয়েশন সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয় বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের টাকা ফেরতের ক্ষেত্রেও নানা গড়িমসি করছে এয়ার প্রিমিয়ার জিএসএ প্রতিষ্ঠান কে বি এভিয়েশন। যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল কোরিয়ার বাঙালি কমিউনিটিতে। ইতিপূর্বে কেবি এভিয়েশনের স্বত্বাধিকারী কালো তালিকাভুক্ত করেছিল দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
এদিকে, সময়মত কোরিয়া যেতে না পারা ও টিকিটের টাকা ফেরত না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। শারমিন নাহার মিনু নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন , এয়ার প্রিমিয়ার টিকেট কেটে তিনবার তারিখ পরিবর্তন খুবই দুঃখজনক। নির্মল পোদ্দার নামের আরেক যাত্রী বলেন, নতুন রুটে এই ধরনের অনিয়ম কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। টাকা ফেরত দেওয়া নিয়েও প্রতিষ্ঠানটি গড়িমসি করছে।
গত ১৪ নভেম্বর কেবি এভিয়েশন লি. এর চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিক রানা তার ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘কেবি এভিয়েশন পরিচালিত এয়ার প্রিমিয়া এয়ারলাইন্সের ১৪ ও ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের ফ্লাইট দুটি রি-সিডিউল করা হয়েছে। আমি সবার নিকট এই সাময়িক সমস্যার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
২৮ নভেম্বর ২০২৩ থেকে প্রতি মাসে দুইটি করে অর্থাৎ প্রতি ২ সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা জানেন বিগত তিনটি ফ্লাইট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কেবি এভিয়েশন-এয়ার প্রিমিয়া এয়ারলাইন্স যৌথভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। ফেসবুকে শফি উদ্দিন আকন্দ এয়ার প্রিমিয়ার চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘দুই বার টিকিট নেওয়ার পরেও দেশে যাওয়া হলো না অবশেষে বিমান পরিবর্তন করতে হয়েছে।’
আনোয়ার হোসেন নামে আরেকজন লিখেন, ১৪ তারিখ মিস হবে এটার জন্য তো ২১ তারিখ বলা হয়েছিল। তবে এখন আবার ২১ তারিখ ও হবে না? তবে কেবি এভিয়েশন বলছে, তাদের ১৩ টি ননসিডিউল চার্টার্ড ফ্লাইট চার্টার্ড ফ্লাইট অনুমতি রয়েছে। এরমধ্যে ৩ টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি ১৫ দিনে ১ টি করে ফ্লাইট পরিচলানা করা হবে। ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি হলেও অনেককে অন্য ফ্লাইটে ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা যেতে চান না তাদের শতভাগ টাকা রিফান্ড করা হয়েছে।
তাদের দাবি, প্রত্যাশা অনুযায়ি যাত্রী না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফ্লাইট কমিয়ে সূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে। ১৩টি ফ্লাইট শেষ হবার পর আবারো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনুমতি নেয়া হবে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে বেবিচক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার আগে তাদের সক্ষমতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা আরও ভালো ভাবে যাচাই বাচাই করা জরুরি। তাদের মতে, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে এয়ার প্রিমিয়ার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাদিকুল আমিন আনন্দ বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে কোরিয়া থেকে বেশ কিছু ফ্লাইট পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এটা ননসিডিউল চার্ডার্ট ফ্লাইট, এর আসন সংখ্যা ৩০৯, ৩৩৮। শিক্ষার্থী, লেবারসহ অন্যান্যদের যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমরা সিভিল এভিয়েশন থেকে অনুমতি নিয়েছি।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) আমাদের সাথে একধরনের প্রতারনা করেছে। বোয়েসেল আমাদের বলেছিলো প্রতি ফ্লাইটে কিছু যাত্রী দেয়ার কথা বলেছিলো, ইমেইল দিয়ে কনফার্মও করেছিলো। পরবর্তীতে ৩টি ফ্লাইটে ১ জন যাত্রীও দেয়নি। বলেছে ভবিষ্যতে দিবে। কবে দিবে তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বোয়েসেল জিন এয়ারকে বৈধ বা অবৈধভাবে গত ৩ বছর ধরে যাত্রী দিচ্ছে।
জিন এয়ারের সাথে তাদের চুক্তি রয়েছে। কোভিডের সময় থেকেই জিন এয়ার কুটনৈতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ২০২১ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো তারা কুটনৈতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সরকার এ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখলে বোয়েসেলস বিপদে পড়বে জিন এয়ার বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি জানান, ফ্লাইট সুচি পরিবর্তনের ফলে যাত্রীদের কিছুটা অসুবিধা হলেও, আমরা যাত্রীদের টাকা ফেরত দিয়েছি। এছাড়াও, যারা অন্য ফ্লাইটের টিকিট চেয়েছিলেন, তাদের সেই টিকিট দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন,”সিভিল এভিয়েশন কোরিয়ার সাথে সিডিউল ফ্লাইট চালানোর চুক্তি করার জন্য চেষ্টা করছে”।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post