ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে গত দেড় মাস ধরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরায়েলের সেসব সরকারি কর্মকর্তা অভিযানকে সহিংস করার নির্দেশ দিচ্ছেন, তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
শনিবার অন্যতম শীর্ষ মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক অপ-এড কলাম (ব্যক্তিগত মন্তব্য) বিভাগে বাইডেন লিখেছেন, ‘আমি ইসরায়েলের নেতাদের জোরালোভাবে বলছি, পশ্চিম তীরে ব্যাপক সহিংসতা চলছে এবং অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে বাধ্য হবে। সেসব পদক্ষেপের মধ্যে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত।’
প্রসঙ্গত, ভিসা ওয়েইভার প্রোগ্রাম নামের একটি মার্কিন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ইসরায়েল। যেসব রাষ্ট্র এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে, সেসব দেশের যাত্রী ও ভ্রমণকারীরা ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেন। গত অক্টোবর এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি পশ্চিম তীরে সহিংসতা অব্যাহত রাখে, সেক্ষেত্রে ভিসা ওয়েইভার প্রোগ্রাম থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়াসহ দেশটির রাজনীতিবিদ ও সামরিক-সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ জারি করার মতো ‘যথেষ্ট সুযোগ’ মার্কিন সরকারের হাতে রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা মন্তব্যে আরও একবার হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ অবসানে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের (টু স্টেট সলিউশন) ওপর জোর দিয়েছেন বাইডেন। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতি আহ্বানের পক্ষে বা বিপক্ষে সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।
মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটন পোস্টে বাইডেনের এই অপ-এড বক্তব্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের ফের মনে করিয়ে দিলো যে বহির্বিশ্বের কোনো সংকট যদি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে, সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না দেশটি।
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
হামাসের হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে তাতে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। সেই অভিযান এখনও চলছে। হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন। অন্যদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গাজায় বোমা বর্ষণ শুরু দিন থেকে পশ্চিম তীর অঞ্চলেও অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী। গত দেড় মাস ধরে চলমান এ অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর সহিংসতায় পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি। এছাড়াও সেখানকার বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিদের সঙ্গেও সংঘাত বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের।
এ যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বাবদ ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসকে অনুরোধও জানিয়েছেন জো বাইডেন।
শনিবারের কলামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘হামাস এবং পুতিন— উভয়ই পৃথিবীর মানচিত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তির পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র কখনও তা হতে দেবে না। কারণ এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ এবং বিশ্বের ভবিষ্যৎ সরাসরি সংশ্লিষ্ট।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post