সামিট টাওয়ারসের নতুন টাওয়ার অধিগ্রহণের ফলে দেশের টাওয়ার ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। ইডটকো বাংলাদেশের পাশাপাশি সামিট টাওয়ারসও এই ব্যবসায় শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করবে। সামিট কমিউনিকেশনস গ্রুপের কোম্পানি সামিট টাওয়ারস লিমিটেড ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় বাংলালিংকের ২ হাজার টাওয়ার কিনছে।
বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিওন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “টাওয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রাথমিকভাবে বাংলালিংকের আর্থিক প্রতিশ্রুতি পূরণ ও কোম্পানির ডিজিটাল সম্প্রসারণে ব্যয় করা হবে।”
বর্তমানে বাংলালিংকের ৬ হাজার ৩৪টি টাওয়ার আছে, সেখান থেকে এক তৃতীয়াংশ সামিট টাওয়ারে স্থানান্তর করবে, যার ফলে বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় সাইটের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সামিটের নতুন টাওয়ার অধিগ্রহণের ফলে দেশের টাওয়ার ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। বর্তমানে এই সেক্টরের মার্কেট লিডার ইডটকো বাংলাদেশ। ইডটকো এখনো এই ব্যবসায়ের প্রভাবশালী অংশীদার এবং বর্তমানে তাদের ১৫ হাজার ৯৫৫টি টাওয়ার আছে। এছাড়া, এটি অন্যান্য টেলিকম কোম্পানির ২ হাজারের বেশি সাইট পরিচালনা করে।
তবে সামিট কমিউনিকেশনসের একটি শক্তিশালী ফাইবার নেটওয়ার্ক ও সাবমেরিন কেবল লাইসেন্স আছে। ফলে, বাজারে তারা শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হবে। তারা ৫৩ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে এবং বাংলাদেশের ইন্টারনেট চাহিদার ৩৫ শতাংশ পূরণ করে। কোম্পানিটি দেশের প্রথম বেসরকারি সাবমেরিন ক্যাবল নির্মাণ করছে।
সামিট কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আল ইসলাম বলেন, ‘টাওয়ার, ফাইবার ও সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আমরা সমন্বিত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তুলব ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদান করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন টাওয়ারের মাধ্যমে আমরা বাংলালিংকের পাশাপাশি অন্যান্য অপারেটরকেও সেবা দেব।’ এর আগে, ২০১৫ সালে ৫ হাজার ২৫৮টি টাওয়ার ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে ২৫০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেছিল রবি। এটি তখন মোবাইল ফোন অপারেটরটির সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা ছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টাওয়ার অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে টাওয়ার-শেয়ারিং লাইসেন্স দেওয়ার পর থেকে ইডটকো শীর্ষস্থানীয় অপারেটর।
গত বছর টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইডটকোকে একটি সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) হিসেবে মনোনীত করে, যা তাদের ২৫ শতাংশেরও বেশি নতুন টাওয়ার চালু করা থেকে বিরত রাখে। এটি সামিটের উৎসাহের একটি কারণ। তখন ৮৫ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার ছিল ইডটকোর দখলে। তারপর থেকে সামিট বেশিরভাগ নতুন টাওয়ার স্থাপন করেছে। অন্য দুটি টাওয়ার কোম্পানি কীর্তনখোলা ও ফ্রন্টিয়ারের যথাক্রমে ৫৬৪ ও ২৭৫টি টাওয়ার আছে।
এই চুক্তির ফলে তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক তাদের নগদ প্রবাহ বজায় রাখতে সক্ষম হবে, কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপারেটরটির একটি অডিটের পর প্রায় ৮২৩ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
এছাড়া টাওয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ বাংলালিংককের মূল প্রতিষ্ঠানের কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে। ২০২১ সাল থেকে ভিওন তিনটি বিষয়কে ভিত্তি করে তাদের সম্পদ মূল্য সংজ্ঞায়িত করেছে, যথাক্রমে অ্যাসেট-লাইট বিজনেস অ্যান্ড ভ্যালু ক্রিসট্যালিসেশন অব টাওয়ার অ্যাসেট, ডিজিটাল অপারেটর কৌশলের সঙ্গে মূল ব্যবসায়ের টেকসই বৃদ্ধি ও সংলগ্ন বাজারের প্রবৃদ্ধি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সামিট টাওয়ারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অ্যাসেট-লাইট বিজনেস অ্যান্ড ভ্যালু ক্রিসট্যালিসেশন অব টাওয়ার অ্যাসেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অবকাঠামোগত সম্পদের ব্যবহারে সর্বাধিক দক্ষতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভিওনের গ্রুপ সিইও কান টেরজিওগলু বলেন, ‘আমাদের বাজারজুড়ে ভিওন অপারেটররা অ্যাসেট-লাইট ডিজিটাল অপারেটরে রূপান্তরিত হচ্ছে। আজকের এই চুক্তি শুধু বাংলালিংকের জন্যই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটি মাইলফলক।’ ‘এই চুক্তি দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল অপারেটর হিসেবে আমাদের মূল ব্যবসায়ের দিকে মনোনিবেশ করতে এবং বিনোদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থিক পরিষেবার অপ্রতুল চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।’
সামিট কমিউনিকেশনস ও সামিট টাওয়ারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান বলেন, বাংলালিংক ও সামিটের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই কৌশলগত চুক্তি করা হয়েছে। ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভিওনের সহায়তায় আমাদের সহযোগিতা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে যাবে এবং এ অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
বাংলালিংকের সিইও এরিক অস বলেন, ‘সামিট টাওয়ারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ডিজিটাল সেবায় আমাদের সম্পদে ফোকাস করতে, সবার জন্য ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং বাংলাদেশের জনগণকে একটি দারুণ গ্রাহক অভিজ্ঞতা দিতে সহায়ক হবে।’ গত দেড় বছরে বাংলালিংকের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এসময় অপারেটরটির দুই অঙ্কের রাজস্ব, গ্রাহক বৃদ্ধিসহ মোট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩০ লখে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব আয় ১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ এবং আমরা এই লাইসেন্সটি চালু করেছি যেন টাওয়ার সম্পদগুলো ভাগ করে নেওয়া যায় এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়।’
আরও দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post