মালয়েশিয়ায় অপহরণের তিনদিন পর এক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিককে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর নিজের ওপর হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ওই প্রবাসী। বলেছেন, অপহরণের পর তিনদিন ধরে তাকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়।
মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে স্থানীয় তিন সরকারি কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান দাতুক হুসেইন ওমর খান। মালয়েশিয়ার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৭ নভেম্বর অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহৃত বাংলাদেশি মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক। অপহরণের তিনদিন পর ৯ নভেম্বর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে অপহরণের শিকার সাংবাদিকের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এমনকি নিজ নাম প্রকাশ করতে চাননি ভুক্তভোগী সাংবাদিকও। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ওই সাংবাদিক তার অপহরণের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ৭ নভেম্বর তিনজন স্থানীয় ব্যক্তি নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য দাবি করে তার পুত্রজায়ার বাসায় প্রবেশ করে। এরপর তারা তাকে বলে, তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ রয়েছে।
ওই সাংবাদিক জানান, এরপর তাকে সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলমের একটি অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগের তিনজনের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন ব্যক্তি। তারা তাকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে উঠার নির্দেশ দেয়। সেই গাড়িতে করে সেখান থেকে তাকে গভীর একটি জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সাংবাদিক গণমাধ্যমকে জানান, জঙ্গলের ভেতর নিয়ে যাওয়ার পর তাকে মারধর শুরু করে অপহরণকারীরা। সেই সঙ্গে তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ১৯ লাখ মালয় রিঙ্গিত। সাংবাদিকের ভাষ্য, ‘তারা আমাকে পেটে আঘাত করে, হাতে আঘাত করে।’
সাংবাদিক জানান, সেখান থেকে এক ঘণ্টারও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তারা তাকে সেলাঙ্গরের ক্লাংয়ের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। এতে হাত-পাসহ সারা শরীরে ক্ষত তৈরি হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাকে একটি ভিডিও দেখানো হয়। যেখানে একটি লোককে জবাই করা হচ্ছে বলে দেখা যায় বলে জানান সাংবাদিক।
ওই ভিডিও দেখিয়ে হুমকি দেয়া হয়, তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ না দিলে তার সাথেও একই কাজ করা হবে অর্থাৎ জবাই করে হত্যা করা হবে। এতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান সাংবাদিক। প্রাণভয়ে অপহরণকারীদের ৫০ হাজার মালয় রিঙ্গিত অনলাইনে ট্রান্সফার করে দেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
সাংবাদিক বলেন, পরদিন (৮ নভেম্বর) অপহরণকারীদের একজন তার শরীরের ক্ষতের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ওই সময় ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান তিনি। গিয়ে অনেকের কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। তারা আবারও তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে।
অপহরণের তৃতীয় দিন (৯ নভেম্বর) সাংবাদিককে সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাংয়ের কাপার এলাকার একটি ব্যাংকের পাশে ছেড়ে দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিক গোমবাক জেলা পুলিশ সদর দফতরে (আইপিডি) একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সেলাঙ্গর পুলিশ প্রধান দাতুক হোসেন ওমর খান। অপহরণের পর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এক বিবৃতিতে সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান দাতুক হুসেইন ওমর খান বলেন, অপহরণের পর অপহৃত সাংবাদিকের ভাতিজা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্লাং উপত্যকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অপহৃত সাংবাদিকের ভাতিজা পুলিশকে জানান, অপহরণকারীরা একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে তাকে ফোনে দিয়ে তৃতীয় একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলে এবং বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর সতর্ক করে। অপহরণকারীরা তার কাছে সাংবাদিকের জন্য মুক্তিপণ দাবি করে বলে, টাকা দিয়ে সে যেন তার চাচাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, অভিযান চালিয়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে অপহরণের সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান জানান, তিন সরকারি কর্মচারীকে আরও তদন্তের জন্য গোম্বাক জেলা পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (বিএসজে) কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। এরপর তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আরও দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post