বিদেশে থেকে টাকা আয় করে স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন স্বামী। দেশে এসে টাকার হিসেব চাওয়ায় তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়িতে ডেকে নিয়ে রাতে ঘুমন্ত প্রবাসী স্বামীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন স্ত্রী। পরে প্রতিবেশীরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার কাটাইল ইউনিয়নের বারোরী গ্রামে রোববার (১২ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাওহীদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগীর নাম এখলাছ উদ্দিন (৩৫))। তিনি পাশের কেন্দুয়া উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের পাছহার গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। এখলাছ সৌদি প্রবাসী। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আগুনে তার শরীরের নব্বই ভাগ পুড়ে।
এখলাছের পরিবার স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মদন উপজেলার খায়রুল মিয়ার মেয়ে মুক্তা আক্তারকে ছয় বছর আগে বিয়ে করেন এখলাছ উদ্দিন। বিয়ের কিছুদিন পর এখলাছ প্রথমে মালেয়েশিয়া যান পরে সেখান থেকে সৌদি আরব চলে যায়। বিদেশ থাকা অবস্থায় তার রোজগারের টাকা স্ত্রীকেই পাঠাতেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে স্ত্রীর কাছে টাকা পয়সার হিসেব চাইলে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়।
রোববার রাতে স্ত্রী মুক্তা আক্তার ফোন করে শ্বশুর বাড়িতে ডাকেন এখলাছকে। রাতে খাবার খেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। পরে মধ্যরাতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্ত্রী। এসময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে এখলাছকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে এখলাছ মিয়ার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থায় অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
অগ্নিদগ্ধ এখলাছ মিয়ার ভাগ্নে মুসলেম উদ্দিন বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে আগে থেকেই টাকা পয়সা নিয়ে বিবাদ চলছিল এখলাছের। গত রাতে এখলাছ মিয়াকে ফোন করে তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যায় স্ত্রী। সেখানে রাতে ঘুমিয়ে গেলে তার ওপরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। মামার (এখলাছের) শরীরের নব্বই ভাগ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার চিকিৎসা চলছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকবাল মিয়া বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এখলাছ বিয়ের কিছুদিন পর বিদেশ চলে যায়। সম্প্রতি দেশে এসে পাঠানো টাকার হিসেব চাইলে তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তার শরীরে পেট্রোল দিয়ে পুড়ানো হয়েছে বলে শুনেছি। এব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত মুক্তা আক্তার ও তার বাবা খায়রুল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ওসি তাওহীদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে যতটুকু শুনেছি, পারিবারিক কলহের জেরে রোববার রাতে বাইরে থেকে গায়ে কেরোসিন মেখে শ্বশুর বাড়িতে যান এখলাছ। ঘরে ঢুকে নিজেই নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন আগুন নিভিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে অভিযোগ পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post